কর বাড়ানোর পূর্বে অর্থ পাচার ও দুর্নীতি বন্ধের দাবি
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২১:৩২,অপরাহ্ন ২১ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
জনসেবা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি কর সম্প্রসারণের পূর্বে অর্থ পাচার বন্ধ ও দুর্নীতি থামানোর দাবি জানিয়েছে কৃষক-শ্রমিক ও নাগরিক সমাজের ২৭ টি সংগঠন। আজ রবিবার বিশ্ব জনসেবা খাত দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।
মানববন্ধনে ইক্যুইটিবিডির রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জনসেবা খাতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ মোট বাজেটের তুলনায় ক্রমান্বয়ে কমছে। অন্যদিকে সরকারী ব্যয় খাত, কর, কালো টাকা ও অর্থপাচার লাগামহীন ভাবে বাড়ছে।
টিআইবির’র এক সমীক্ষার বরাদ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর দুর্নীতির কারণে জিডিপির প্রায় ২ থেকে ২ দশমিক ৫ ভাগ ক্ষতি হচ্ছে। আর এর প্রধান খাত সরকারী ব্যয়। কিন্তু বাংলাদেশের মত দেশে দারিদ্র দূরীকরণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় জনসেবা খাত যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাবার পানি, বিদুৎ ও যোগাযোগ খাতের কাংখিত লক্ষ্য অর্জন করতে গুনগত মান বৃদ্ধি অপরিহার্য্।
বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সুবল সরকার বলেন, বিদ্যমান কর ব্যবস্থা শুধু অন্যায্যই না, এটা দুর্নীতি ও লুটপাটকে শক্তিশালী করছে। এর পেছনে রয়েছে ব্যয়ের অগ্রাধিকার নির্বাচনে ব্যর্থতা, ধনীদের ওপর আয়কর না চাপিয়ে গরীব ও সাধারণ নাগরিকের ওপর বেশি পরিমাণে করভার আরোপ, কালো টাকা সাদা করার সুযোগের মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ বানানোর সুযোগ বহাল, সুইস ব্যাংকে টাকা পাচার, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ অন্যান্য সেকেন্ড হোম প্রকল্প ছাড়াও নানাভাবে বহুজাতিক কোম্পানি ও দেশীয় লুটেরাদের রোধে কোন কার্য্কর ব্যবস্থা না নেয়া।
তিনি বলেন, ঋণের সুদ পরিশোধ বর্তমানে বাজেটে ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত। ফলে বরাদ্দে টান পড়েছে অত্যাবশকীয় জনসেবা খাতে। আর মানসম্পন্ন সেবা থেকে যারা বঞ্চিত, সেই সাধারণ মানুষই কর দেয় বেশি।
গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইনটেগরিটির এক প্রতিবেদনের বরাদ দিয়ে তিনি বলেন, অর্থপাচারের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশের মাথাপিছু ৬ দশমিক ৮৪ ভাগ, বা প্রায় ৮ হাজার দুইশত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। যা দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৫৮ দশমিক ৯ ভাগ এবং শিক্ষা খাতে ৩০ ভাগ বহন করা সম্ভব হত।
একটি গণমাধ্যমের (আমাদের বুধবার) বরাদ দিয়ে সুবল সরকার বলেন, বিদেশে সেকেন্ড হোম বানানোর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের লুটেরা ধনিক শ্রেণী মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করছে। শুধুমাত্র মালয়েশিয়ায় এ পর্য্ন্ত ২ হাজার ৩ শত ৭০ জন বাংলাদেশী ‘সেকেন্ড হোম’ সুবিধা নিয়েছেন। গত এক দশকে তারা ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচার করেছেন।
দারিদ্র বিমোচনে সেবা খাতে বিনিয়োগ জরুরী উল্লেখ করে মানববন্ধনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রশাসনিক ব্যয় হ্রাস, দুর্নীতি হ্রাস, বিত্তশালীদের সম্পদে করারোপ, অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ, দ্বৈত নাগরিকদের প্রতিবছর ব্যাংক বিবরনী সরকারের কাছে প্রদান, বিদেশে সেকেন্ড হোম প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণকারীদের আর্থিক লেনদেনের তথ্য পরীক্ষা করে শ্বেতপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন দেশের সাথে ব্যাংক লেনদেনের স্বচ্ছতার উপর আন্ত-দেশীয় চুক্তি সম্পাদন, আইনগত শাস্তির বিধান রেখে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার বন্ধ করা, নিয়ন্ত্রণহীন মোবাইল ব্যাংকিং এর উপর মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা, জনসেবা খাতে বিনোয়োগ বৃদ্ধি করা, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ন হওয়ার চাপ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে সৈয়দ আমিনুল, মীর মিহির, লাভলী ইয়াসমীনসহ অনলাইন নলেজ সোসাইটি, আওয়াজ, ইক্যুইটিবিডি, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, উদয়ন বাংলাদেশ, এডিবি ইন্টারন্যাশনাল, ক্লিন, জন অধ্যয়ন কেন্দ্র, জাতীয় শ্রমিক জোট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার, ডেভেলপমেন্ট সিনার্জি ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।