ওসমানীনগর সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে চলছে অনিয়ম : রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রির হিড়িক
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫১:৩৪,অপরাহ্ন ২১ জুলাই ২০১৪
শিপন আহমদ,ওসমানীনগর
সিলেটের ওসমানীনগরের তাজপুর সাব রেজিষ্ট্রার অফিস সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষ নিরব থাকায় এ অফিসে প্রকাশ্যে চলছে দুর্নীতি ও অনিয়ম। ফলে জমির মালিকরা জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে গিয়ে নানা জামেলা পোহাতে হচ্ছে। কিছু অসাধু দলিল লেখকসহ অফিস সংশ্লিষ্টরা গ্র্রহীতার কাছ থেকে মোটা অংকের মুনাফা নিয়ে অনিয়মকে নিয়মে করে নিচ্ছেন।
অন্যদিকে কতিপয় দলিল লেখকদের মাধ্যমে এলাকায় গড়ে উঠেছে ভূমি জালিয়াতি চক্র। চক্রটি ভূমি সংক্রান্ত উর্ধ্ধতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও সিল জাল করে ভূয়া কাগজ বানিয়ে দিয়ে প্রতিদিন সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। বিষয়গুলো নিয়ে অনেক সময় সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস প্রাঙ্গনে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হাতা-হাতি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাদীপুর এলাকার কিবরিয়া আহমদের খছরুপুর মৌজার বাড়ি বিট রকমের ৫ শতক জমি গেল বছরের ৮ ডিসেম্বর ২৫৫৮ নং দলিল মূলে কতিপয় দলিল লেখকদের মাধ্যমে ভূঁয়া কাগজপত্রে চারা রকমের ভূমি দেখিয়ে রেজিষ্ট্রি ফি ১১ হাজার ৪৩০ টাকা জামা দিয়ে রেজিষ্ট্রারী করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে ওই রেজিষ্ট্রারীকৃত জমির প্রকৃত মূল্য ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা হারে রেজিষ্ট্রারী ফ্রি হয় ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬ শত টাকা। রকম বদলিয়ে রেজিষ্ট্রারী করার ফলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ১শত ৭০ টাকা। শুধু এই জমি নয় সম্প্রতি উপজেলায় একাধিক বিপুল অংকের বিক্রি কৃত জমির ভূয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে জমির রখম বদলিয়ে কম ফ্রি দিয়ে রেজিষ্ট্রি করে নিচ্ছে গোঠিকয়েক দলিল লেখকরা। ফলে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে এ সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস থেকে।
একটি নির্ভরশিল সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে আদায় করা অর্থ সাব রেজিষ্ট্রার, অফিস সহকারী ও কতিপয় দলিললেখকরা ভাগবাটোরা করে নিয়ে থাকেন। সরকার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের সকল লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে চালু করার নিয়ম করলেও থেমে নেই এ অফিস সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম। একটি দলিল রেজিষ্ট্রি করতে হলে অতিরিক্ত সেরেস্তা বাবদ অফিসে ১.৫০ হারে টাকা বিনা রসিদে দিতে হয়। দলিল প্রতি ২ থেকে ৫ হাজার টাকা, এছাড়া কোন জামেলাযুক্ত জমি রেজিষ্ট্রির ক্ষেত্রে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা দিতে হয় সাবরেজিষ্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট অফিস সহকারীকে। খারিজ বিহীন জমি রেজিষ্ট্রি করার নিয়ম না থাকলেও টাকার মাধ্যমে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের এক অফিস সহকারী ও নির্দিষ্ট দলিল লেখকের মাধ্যমে ওই দলিল পেশ করে ভূঁয়া খারিজের কাগজ পত্রের মাধ্যমে জমি রেজিষ্ট্রারী করে নেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখকরা জানান, জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে জমির নির্ধারিত মূল্য থেকে কম মূল্য ধরে রেজিষ্ট্রি করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া গেলেও এ জন্য স্যারকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। এছাড়া গ্রহিতা না থাকলে এখানে প্রতি একজন গ্রহিতার অনুপস্থিতির বিনিময়ে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয় সাব-রেজিষ্ট্রার স্যারসহ অফিস সংশ্লিষ্টদের।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বাবু সতেন্দ্র কুমার দেব বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে চাইনা।
সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুর রকিব সিদ্দিক অভিযোগগুলি অ¯ী^কার করে বলেন, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রারী হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনসহ জমির গ্রহিতাকে প্রকৃত টাকা কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হবে।