এসেছে রোজা, প্রস্তুত অজ্ঞানপার্টি
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:১৯:৪৯,অপরাহ্ন ১৮ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
সামনে রমজান ও ঈদ। অজ্ঞান পার্টির ভরা মৌসুম! আর তাই চেতনানাশক মেশানো আরদে খোরমা (হালুয়া জাতীয় খাবার) নিয়ে মাঠে নেমেছে অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্নস্থান থেকে এসব চক্রের বেশ কিছু সদস্য গ্রেফতারও হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্নস্থানে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে সর্বস্বান্ত করছে এ চক্রের সদস্যরা। খাদ্যে বিষাক্ত চেতনানাশক দেওয়ায় প্রাণও যাচ্ছে অনেকের।
রাজধানীর বিভিন্নস্থানে সক্রিয় অজ্ঞানপার্টির অন্তত দেড় ডজন চক্রকে চিহ্নিত করে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। এসব চক্রের কয়েকজন হোতাসহ কিছু সহযোগী কারাগারে থাকলেও অনেকে জামিনে বেরিয়ে আবার মাঠে নেমেছে। তাদের ধরতে এরইমধ্যে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে গত দু’দিনে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান ও মলম পার্টির ২১ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হাইকোর্ট এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান জানান, বুধবার রাত ৮টার সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে যাত্রাবাড়ী আসার পথে মহানগর ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে মলম ও অজ্ঞানপার্টির ছয়জনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- মো. আল আমিন সর্দার, মো. নিয়ন খান, তৌহিদুল ইসলাম সোহেল, আবদুস সামাদ ওরফে সালমান, মো. আলী হোসেন ভূঁইয়া ও মো. উজ্জল। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশে-পাশের এলাকা তেকে জুম্মান, আনিস, মাইনুদ্দিন, শহিদুল, রমজান, মো. আলী, ওয়াজিব, সুমন, তুষার, দেলোয়ার হোসেন বাবু, মাসুদ ওরফে ল্যাংড়া মাসুদ, আমির হোসেন, মো. শুক্কুর, আলী খোকন ও আক্তার হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে আরদে খোরমা নামের এক ধরনের ঔষধ, চেতনা নাশক ট্যাবলেট ডরমিকাম, মাইলাম, অ্যাটিভ্যান, ব্লেড ও বেশ কিছু মলম উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা।
পরে ডিএমপি’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান গ্রেফতারকৃত ২১ জনের মধ্যে ১২ জনকে দু’বছর, ছয়জনকে এক বছর ও তিনজনকে ছয় মাস সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অজ্ঞান করে সাধারণ মানুষের টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যাওয়ায় সাধারণত ৩২৮ ও ৪২০ ধারায় মামলা করা হয়। ৩২৮ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এ ধরনের (অজ্ঞান পার্টি) অপরাধীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হয় না। আইনের ফাঁকে তারা খুব কম সময়ের মধ্যেই আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশেই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানায় গোয়েন্দা পুলিশ। বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গিয়েও নানা কৌশলে মানুষকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাচ্ছে তারা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত দেড় মাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ঢামেক হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন অন্তত ১৫০ জন। গত ৩ মে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর সায়েদাবাদ, গুলিস্তান ও মিরপুরে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সাতজন ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। গত ৫ মে বরগুনার পাথরঘাটার দেলোয়ার হোসেন (৩৫) তার আত্মীয় মিজানুর রহমানকে (২৫) নিয়ে ঢাকায় আসার পথে বাসে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েন। পরদিন ৬ মে গুলিস্তানে বিএইডব্লিউটিসির প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান, ডেমরার আলেয়া বেগম ও তার মেয়ে ইভা, আবদুর রাজ্জাক কাজী (৪২) অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে সর্বস্ব হারান।
এ ছাড়াও গত ২৮ মে সিলেট থেকে ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে এসে অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে প্রাণ হারান সাইদুর রহমান। সাইদুর রহমান সিলেটের এমসি কলেজের গণিত বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। গত ৭ জুন রাজধানীর ডেমরা এলাকায় অজ্ঞানপার্টির খপ্পরে পড়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক যুবকের (৩০) মৃত্যু হয়েছে।
বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেওয়া গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রতারকরা সংঘবদ্ধ। একটি দলে চার-পাঁচজন কাজ করে। প্রথমে তারা কাউকে টার্গেট করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে। পরে তার ইঙ্গিত অনুযায়ী অজ্ঞানপার্টির অপর সদস্য হকার সেজে খাবার বিক্রি করে। ওই খাবার খাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অচেতন হলেই শুরু হয় লুট।
রাজধানীর ভেতর যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী ও কমলাপুর রলওয়ে স্টেশন এলাকায় অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা তৎপর বেশি।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি আবদুল মজিদ জানান, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে কমলাপুর রেল স্টেশনসহ তার থানা এলাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরইমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা প্রতারকচক্রের সদস্যদের ধরতে নজারদারী করবেন।
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ফুটপাত, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন বা বাসস্টান্ড, হাটবাজার ও বিপণি বিতানসহ জনবহুল জায়গায় হকার সেজে থাকে। তারা ডাবের পানি, জুস, চা, কফি, পান, খেজুর, ঝালমুড়ি, শক্তিবর্ধক হালুয়া, বিস্কুট, চকলেট, রঙিন পানীয় ইত্যাদির সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য মেশায়।
তিনি বলেন, অনেকগুলো চক্র রাজধানী ও আশে-পাশের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। এসব প্রতারক চক্রের তৎপরতা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারীর কারণে তারা সুবিধা করে উঠতে পারছে না। এরইমধ্যে অজ্ঞানপার্টির একাধিক নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও এদের অনেকে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন। তারপরও জনসাধারণকেও সতর্ক ও সচেতন হতে হবে বলে জানান তিনি।
সূত্র : ট্রিবিউন