এবার বাংলাদেশ হয়ে কলকাতা-কুনমিং ট্রেন চায় চীন
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:২৬:৫৬,অপরাহ্ন ১৮ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
প্রাচীন বাণিজ্যপথ সিল্ক রুটকে আবার পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টায় কুনমিং থেকে কলকাতা পর্যন্ত হাইস্পিড রেল নেটওয়ার্ক গড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন যে রেলপথ যাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দিয়ে। চীনের কুনমিং শহরে সদ্যসমাপ্ত গ্রেটার মেকং সাবরিজিয়ন (জিএমএস) বৈঠকেই চীনের তরফে এই প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
চীনের কুনমিং থেকে ভারতের কলকাতা পর্যন্ত প্রাচীন একটি বাণিজ্যিক পথকে নতুন করে আবার জিইয়ে তোলার এই প্রয়াস অবশ্য নতুন নয়। দুদেশের সরকারি সমর্থনে ও বেসরকারি উদ্যোগে কে-টু-কে (কলকাতা টু কুনমিং) ফোরাম নামে একটি ইনিশিয়েটিভ ঠিক এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে গত বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু দুই শহরের মধ্যে সরাসরি ট্রেন-সংযোগ স্থাপনের প্রস্তাব – তাও আবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে অত্যাধুনিক হাইস্পিড রেললাইন পেতে সেটা চীনের পক্ষ থেকে এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এল।
জিএমএস বৈঠকে চীনের ইয়ুনান প্রদেশের ভাইস-সেক্রেটারি লি জি মিং বলেছেন, ‘আমরা ভীষণভাবে চাই এই ট্রেনলাইন হোক। আর এতে শুধু কলকাতা বা কুনমিং-ই নয়, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অর্থনীতিও দারুণ উপকৃত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’ তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মতো বহুপাক্ষিক বিভিন্ন সংস্থাই এই প্রকল্পের অর্থায়নে সায় দিয়ে রেখেছে।
ফলে প্রকল্পের ভাবনা অনেকদূর এগিয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। এই রেল নেটওয়ার্ক স্থাপিত হলে সেটা হবে বিসিআইএম (বাংলাদেশ-চায়না-ইন্ডিয়া-মিয়ানমার) করিডরের একটা অংশ যে পুরনো বাণিজ্যিক রুটকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য চীন ইদানীং বিস্তর দৌড়ঝাঁপ করছে। গত বছর ভারত সফরে এসে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং নিজে এই প্রকল্প রূপায়নের অঙ্গীকার করে গেছেন। পরে বেজিংয়েও তিনি এই করিডরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারটি দেশের কর্মকর্তাদের নিয়েও বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ যখন চীন সফরে গিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট শি নিজে তাঁর সঙ্গেও কথা বলেছেন এই করিডর নিয়ে।
আর এই আগ্রহ থাকাটাই তো স্বাভাবিক। বাণিজ্য গবেষকরা বলছেন, প্রাচীন সিল্ক রুট বা অধুনা যার নামকরণ করা হচ্ছে বিসিআইএম করিডর– সেটাকে নতুন করে আবার চালু করা গেলে বার্ষিক অন্তত ১৩২ বিলিয়ন (১৩ হাজার ২০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্য হতে পারে সেই পথে। আর সে কারণেই চীন আগেভাগে ঘোষণা করে রেখেছে, এই করিডর তৈরিতে তারা নিজেরাই অন্তত ৪০ কোটি ডলার লগ্নি করতে রাজি।
কলকাতা থেকে কুনমিং পর্যন্ত হাইস্পিড রেল নেটওয়ার্ক সত্যিই স্থাপন করা গেলে সেই রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য হবে ২৮০০ কিলোমিটারেরও বেশি। চীনের ইয়ুনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং থেকে রওনা হয়ে মিয়ানমারের গহীন জঙ্গল আর পাহাড় পেরিয়ে, ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন ছুঁয়ে সেই ট্রেন এসে থামবে কলকাতায়। যাত্রী আর পণ্য – দুইই পরিবহন করা যাবে তাতে, যদি অবশ্য সংশ্লিষ্ট চারটি দেশের তাতে কোনও আপত্তি না-থাকে।
বস্তুত বাংলাদেশের যে এই করিডর আর রেলপথ স্থাপন নিয়ে কোনও আপত্তি নেই, সে কথা তারা অনেক আগেই চীনকে জানিয়ে রেখেছে। মিয়ানমার সরকার খুব যে আগ্রহ দেখিয়েছে তা বলা যাবে না, তবে এই প্রকল্প তাদের জন্য আর্থিকভাবে লাভজনক হবে এটা তারাও অনুধাবন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও মিয়ানমার গোটা প্রকল্পের খুব সামান্যই অর্থায়ন করতে পারবে। প্রকল্পের সিংহভাগ খরচ বহন করতে হবে রেলপথের দুই টার্মিনাল স্টেশন যে দেশে, সেই চীন আর ভারতকে। এখন বিশ্ব অর্থনীতির এই দুই ক্ষমতাধর শক্তি যদি এই প্রকল্পের লাভক্ষতির হিসেবনিকেশ আর অর্থায়নের ফর্মুলা নিয়ে রাজি হয়ে যেতে পারে, চার দেশের বুক চিরে হাইস্পিড ট্রেনের ছুটে চলাটাও আর স্বপ্ন থাকবে না মোটেই!
এই মুহূর্তে কলকাতা আর ঢাকা, দুই শহর থেকেই চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স-এর সরাসরি কুনমিং ফ্লাইট আছে। এই ফ্লাইটগুলোতে দুই বাংলার ব্যবসায়ী-পর্যটকদের যে ঢল চোখে পড়ে তাতে বোঝা যায় দক্ষিণপশ্চিম চীনের এই অঞ্চলটি কীভাবে বাঙালিদেরও আকৃষ্ট করছে। আগামী মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে চীনের শ্যানডং এয়ারলাইন্স দিল্লি আর কুনমিংয়ের মধ্যেও সরাসরি বিমান পরিষেবা চালু করতে যাচ্ছে। অর্থাৎ ইয়ুনান প্রদেশ আরও বেশি করে ভারতের কাছাকাছি চলে আসছে।
এখন চীনের গরজে যদি কলকাতা-কুনমিং রেলপথটাও দিনের আলো দেখে ফেলে – চোখ বুজে বলে ফেলা যায় দুনিয়ার এই প্রান্তে চারটে দেশ জুড়ে তেমন সাড়া-ফেলা ঘটনা কিন্তু খুব কমই ঘটেছে!
সূত্র : ট্রিবিউন