এফবিসিসিআই’র ভোট গ্রহণ চলছে : কী আছে সিলেটের দুই প্রার্থীর ভাগ্যে
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০৪:০১,অপরাহ্ন ২৩ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির(এফবিসিসিআই) ২০১৫-১৭ সালের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে।
পূর্ব ঘোষিত সময় অনুযায়ী শনিবার(২৩ মে) সকাল ৯টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এ ভোট গ্রহণ চলবে। এরপর রাতেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। সদস্যের পরিচালক পদে বৃহত্তর সিলেটের দু’জন প্রার্থী রয়েছেন। এই দুই প্রার্থী ও সিলেটের ব্যবসায়ী ভোটারদের সকলেই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। একজন আজ গিয়ে পৌঁছেছেন।
সিলেটের দুই প্রার্থী নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দু’জনই নিজেদের পাল্লা ভারি রাখতে এত দিন দৌড়ঝাঁপ করেছেন। আজ শনিবার তার ফল পাওয়া যাবে। সবারই উৎকণ্ঠ অপেক্ষা, কী আছে সিলেটের দুই প্রার্থীর ভাগ্যে। দু’জনই জয়ী হতে পারবেন তো। উত্তর পেতে ফল হাতে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
সিলেটের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এই চেম্বারে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক হাসিন আহমদ। তিনি এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ইন্ট্রাকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মনোয়ারা হাকিম আলীর নেতৃত্বাধীন ‘স্বাধীনতা ব্যবসায়ী পরিষদ’ (চেম্বার গ্রুপ) প্যানেলের প্রার্থী। অপর প্যানেল নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বাধীন ‘উন্নয়ন পরিষদ’ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট।
সিলেটের চার জেলার রয়েছে চারটি চেম্বার, সিলেট মহানগরীতে রয়েছে অতিরিক্ত আরও দু’টো মেট্রো ও উইমেন্স চেম্বার। এই ছয় চেম্বারে এফবিসিসিআইর ভোটার সংখ্যা ৩৪ জন। এগুলোর মধ্যে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের ৬টি, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের ৬টি, সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্সের ৬টি, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের ৬টি, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্সের ৬টি ভোট রয়েছে। এই পাঁচটি চেম্বার ‘এ’ ক্যাটাগরির। ‘বি’ ক্যাটাগরির হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের ভোট ৪টি। এফবিসিসিআইর সারাদেশের ভোটার ৪৩২ জন।
ব্যবসায়িক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে ঘিরে এবার অন্যরকমের আমেজ ছিল ব্যবসায়ী মহলে। প্রার্থীরা পূর্ণশক্তি দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। দিয়েছেন মুখরোচক নানা প্রতিশ্রুতি। মন জয় করতে পাঠিয়েছেন উপহার-উপঢৌকনও। প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল, এফবিসিসিআইর মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স, মফস্বল চেম্বারের বিল্ডিং নির্মাণ, ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের সুদের হার এক ডিজিটের (৯ এর মধ্যে) নিয়ে আসাসহ ব্যবসায়ীদের কল্যাণে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখা।
সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও এফবিসিসিআইর ভোটার হোরায়রা ইফতার হোসেন বললেন, এবার খুব হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে হচ্ছে। সব প্রার্থীরাই বেশ সিরিয়াসলি মাঠে ছিলেন। সিলেট এসে ভোট চেয়েছেন। যারা আসতে পারেননি তারা ফোন-ই মেইলে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন। পাঠিয়েছেন উপঢৌকনও। তিনি বলেন, যে প্যানেলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাক বা যিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, আমাদের দাবি থাকবে সিলেটের উন্নয়নে যেন তারা কার্যকর ভূমিকা নেন। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতেই যেন তা সীমাবদ্ধ না থাকে।
এই চেম্বার থেকে আরেক পরিচালক ও এফবিসিসিআইর ভোটার মুহিতুল বারী বলেন, দুই প্যানেল থেকে সিলেট দুই ব্যবসায়ী প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। আমরা আশা করব, উভয়েই বিজয়ী হয়ে আসবেন। দুই প্রার্থীর মধ্যে সিলেট মেট্রো চেম্বার থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী হাসিন আহমদ আগেও এফবিসিসিআইর পরিচালক ছিলেন। তিনি বলেন, অনেকেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লেও হাসিন আহমদ ‘ক্লিন ইমেজ’ নিয়ে দায়িত্ব সম্পন্ন করেছিলেন।
সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও এফবিসিসিআইর ভোটার খায়রুল হুদা চপল বলেন, সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী হিসেবে নির্বাচিত পর্ষদের কাছে আমাদের দাবি মফস্বল চেম্বারগুলোর উন্নয়নে এফবিসিসিআইর উদ্যোগ নেবে। একই সাথে নির্বাচিত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ব্যাংক ইন্টারেস্টকে এক ডিজিটে নামিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি মতলুব প্যানেল ব্যক্ত করেছেন সেটি তারা বাস্তবায়ন করবেন।
এফবিসিসিআইর নির্বাচনে মাতলুব আহমাদের নেতৃত্বাধীন ‘উন্নয়ন পরিষদ’ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট বলেন, আমরা বিজয়ী হলে এফবিসিসিআইর মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স, মফস্বল চেম্বারের বিল্ডিং নির্মাণ, ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের সুদের হার এক ডিজিটের (৯ এর মধ্যে) নিয়ে আসাসহ উন্নয়নমূলক সব পদক্ষেপই নেব।
মনোয়ারা হাকিম আলীর নেতৃত্বাধীন ‘স্বাধীনতা ব্যবসায়ী পরিষদ’ (চেম্বার গ্রুপ) প্যানেলের প্রার্থী সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারে সিনিয়র সহসভাপতি ও এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক হাসিন আহমদ বললেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ এর সফল বাস্তবায়ন করতে এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে নির্বাচনে গিয়েছি। তিনি বলেন, সারাদেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থই এফবিসিসিআইর স্বার্থ।
নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতির ব্যাপারে হাসিন আহমদ জানালেন, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারের প্রায় সব ভোটারই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।
সূত্র জানিয়েছে, এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার থেকে ১৬ জন করে মোট ৩২ জন পরিচালক নির্বাচিত হবেন। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে আরও ২০ জন মনোনীত পরিচালকসহ ৫২ জন নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের বোর্ড গঠিত হবে।
পরিচালক নির্বাচন শেষে আগামী ২৫ মে সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি এবং একজন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবেন। সংগঠনের সভাপতি ও সহ সভাপতি নির্বাচিত হবেন চেম্বার গ্রুপ থেকে। আর প্রথম সহ সভাপতি নির্বাচিত হবেন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে।