এখন কী করবেন শন অ্যাবট?
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৩৫:২৮,অপরাহ্ন ০১ ডিসেম্বর ২০১৪
স্পোর্টস ডেস্ক: শন অ্যাবটের অবস্থাটা কী একবার ভাবুন তো! তাঁর এক খুনে বাউন্সারে আস্ত একটা জীবনের প্রদীপ নিভে গেল। জীবনে কী স্বাভাবিক হতে পারবেন তিনি! বয়স তো মাত্রই ২২। এই বয়সেই এমন একটা ঘটনার সঙ্গে নাম জড়িয়ে গেছে। অথচ খেলার মধ্যে ঘটা এই দুর্ঘটনায় তো কোনোভাবেই দায়ী করা যায় না তাঁকে। যিনি চলে যাওয়ার, তিনি তো চলেই গেছেন। কিন্তু এই ভয়াবহ মানসিক আঘাত থেকে অ্যাবটকে বের করে আনাই এই মুহূর্তে কর্তব্য হিসেবে মানছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত মঙ্গলবার সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে কোথা থেকে যেন কী হয়ে গেল! ৬৩ রানে অপরাজিত ফিল হিউজকে আউট করার সম্ভব সব ধরনের চেষ্টাই করে যাচ্ছিলেন বোলাররা। অ্যাবট এমনই একটা প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। অন্য সময় হলে ওই বাউন্সারটাকে দারুণ ডেলিভারি হিসেবেই আখ্যা দেওয়া হতো। কিন্তু দুর্ঘটনা তো আর বলে কয়ে আসে না। অ্যাবটের বলটিতে তো অনেক কিছুই হতে পারত। হিউজ ক্যাচও হয়ে যেতে পারতেন। কিংবা হুক করে মারতে পারতেন দারুণ দৃষ্টি-নন্দন এক বাউন্ডারি। কিন্তু এসবের কোনো কিছু না হয়ে অ্যাবটের বলটা হয়ে উঠল হিউজের ‘হন্তারক’। খেলার মাঠে এর চেয়ে দুঃসহ অনুভূতি আর কীইবা হতে পারে!
মঙ্গলবারের পর থেকেই মানসিকভাবে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছেন অ্যাবট। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড থেকে হিউজের সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে ছুটে গেছেন। সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালের লবিতে বসে অঝোরে কেঁদেছেন। নিজের সবটুকু দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করেছেন হিউজকে ফিরিয়ে দিতে। সেই হিউজের মৃত্যুর মুহূর্তে তাঁর অনুভূতিটা কেমন হয়েছিল ভাবুন তো! তাঁর বাউন্সারে আঘাত পেয়ে একজন দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন—এমন অনুভূতি কতটা দুঃসহ, সেটা বোঝার জন্য অ্যাবটের জায়গায় যে কেউ নিজেদের দাঁড় করিয়ে দেখতে পারেন।
অ্যাবট এমন পরিস্থিতিতে পাশে পাচ্ছেন প্রায় সবাইকেই। সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মার্টিন ক্রো তাঁর এক কলামে লিখেছেন, ‘আমার সব সহমর্মিতা থাকছে শন অ্যাবটের জন্য। এই মৃত্যুর জন্য সে কোনোভাবেই দায়ী নয়। সে একটা ভালো বল করেছিল, সেই বলে ব্যাটসম্যানের হুক বা পুল করার চ্যালেঞ্জ ছিল।’
হিউজের শোকাতুর পরিবারও দাঁড়িয়েছে অ্যাবটের পাশেই। হিউজেরই এক ঘনিষ্ঠজন বলেছেন, ‘সে অবশ্যই ভুল কিছু করেনি। আমরা ওর পাশেই আছি। হিউজ বেঁচে থাকলে বলত, ঠিক আছে দেখি পরের বলটা করো তো!’সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালেই অ্যাবটের সঙ্গে কথা বলেছেন হিউজের বোন মেগান। ভাই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা অবস্থাতেই মেগান অ্যাবটের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। ভাইয়ের মৃত্যুর পরও বেশ কিছু সময় অ্যাবটের পাশে মেগান কাটিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
কিন্তু সবকিছুর পরও অসময়েই ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ছেদ পড়ে যাওয়ার ঝুঁকির মুখে আছেন এই তরুণ, উদীয়মান অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার। তাঁর ক্যারিয়ার রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছেন খোদ অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। বলেছেন, ‘কেউ এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য অ্যাবটকে দায়ী করতে পারেন না। এই ঘটনার পর পুরো অস্ট্রেলীয় দলই তাঁর পাশে আছে। আমরা তাঁকে স্বভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সম্ভব সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।’
ক্লার্ক অবশ্য স্বীকার করেছেন যে এই ঘটনা অ্যাবটের জীবনে খুব বড় ধরনের প্রভাব রেখে যাবে, ‘হ্যাঁ, এই দুর্ঘটনা তাঁর জীবন চিরদিনের জন্য বদলে দেবে। কিন্তু আমি বলতে পারি, অ্যাবট দারুণ একটা ছেলে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে তাঁর আছে দুর্দান্ত এক ভবিষ্যৎ। কেউ তাঁকে এই দুর্ঘটনার জন্য কোনো অবস্থাতেই দায়ী করতে পারে না। অ্যাবট নিতান্তই দুর্ভাগ্যের শিকার। ও আমাদের পূর্ণ সমর্থন অবশ্যই পাবে।’
সাবেক অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার জেসন গিলেস্পিও থাকছেন অ্যাবটের পাশেই, ‘অ্যাবটের মতো দুর্দান্ত একটা ছেলে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট অঙ্গন থেকে হারিয়ে যায়, তা হয় নাকি! সে মাঠে ফিরবেই। আমরা সবাই মিলেই ওকে সাহস জুগিয়ে যাব।’
মঙ্গলবারের অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার পর থেকেই মনোবিদের অধীনে আছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে একটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলা এই উদীয়মান ফাস্ট বোলার। সূত্র: পিটিআই, ইন্ডিয়া টিভি।