এক নজরে বাজেট ২০১৫-১৬
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪৬:০৪,অপরাহ্ন ০৪ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক ::
আকার ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
ঘাটতি ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।
ব্যাংক ঋণ ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি
বৈদেশিক উৎস্য থেকে পাওয়া যাবে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা।
সরকারের সামগ্রিক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ০৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা।
এনবিআর কর ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
এনবিআর বহিভূর্ত কর ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
এডিপি ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়ানো ও দারিদ্র্যের হার কমাতে প্রবৃদ্ধির হার আরও বাড়ানোর কৌশলী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ”সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ- উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথ রচনা” শীর্ষক অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা উপস্থাপনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ খোশ মেজাজে তার নিজ আসনে বসে ছিলেন। তার নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত সরকারের এটি দ্বিতীয় বাজেট।
প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের নতুন বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরীসহ সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রওশন এরশাদের নেতৃত্ত্বাধীন জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদলের সদস্য সদস্যরা এবার দ্বিতীয়বারের মতো উপস্থিত ছিলেন। বেলা সাড়ে তিনটার কিছু সময় পর সাদা রংয়ের সুতির পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোর্ট ও কালো বেল্টের সু স্যান্ডেল পরিহিত সদা হাস্যজ্জোল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কালো ব্রিফকেস হাতে নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন তখন সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে তাদের স্বাগত জানান।
এর আগে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে বিশেষ মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করে মন্ত্রিপরিষদ। পরে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদিত বাজেটে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। বেলা ৩টার কিছু সময় আগে সংসদ ভবনস্থ তার কার্যালয়ে আসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ব্যক্তি করসীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে নারী ও ৬৫ বছরের অধিক বয়স্কদের জন্য এ সীমা ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ এবং প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্থলে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গেজেটভূক্ত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৪ লাখ টাকার স্থলে বাড়িয়ে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষিখাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে মুল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ শতাংশ।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের মুল ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। এর মধ্যে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ০৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির যা জিডিপির ১২ দশমিক ১ শতাংশ। অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ব্যয়সহ এবারের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
রাজস্ব আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার কর রাজস্ব প্রাক্কালন করা হয়েছে। যা জিডিপির ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এনবিআর বহিবর্ভূত কর ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।
এ বছর ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক সহায়তা বাবদ পাওয়া যাবে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। যা জিডিপির মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে পাওয়া যাবে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অভ্যন্তরীন উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ব্যাংক থেকে ঋন নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। যা জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ। সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে পাওয়া যাবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ১ শতাংশ।
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নতির চ্যালেঞ্জের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে পদ্মাসেতু খাতে। যোগাযোগ ও পরিবহন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। এ বছর সর্বোচ্চ জনপ্রশাসন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। যা মোট ব্যায়ের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে বরাদ্দ ১৮ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। শিক্ষা প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ৩৪ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। যা মোট ব্যায়ের ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিরক্ষাখাতে বরাদ্দ ১৮ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৬ দশমিক ২ শতাংশ। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১ হাজার ১ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৭ শতাংশ। জনশৃংখলা ও নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ১৩ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে ১২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী যে সকল চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন তা হলো- মন্দা মোকাবিলা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, রাজস্ব খাতে পরিকল্পিত সংস্কার কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, পদ্মা সেতুসহ সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ সরবরাহ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি ও খাদ্যখাতে ভর্তুকিসহ কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় হ্রাস এবং প্রয়োজনে কৃচ্ছতাসাধান। এছাড়া জ্বালানি খাতে স্বয়ংক্রিয় মূল্য সমন্বয় প্রদ্ধতি বাস্তবায়ন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখা, বিদেশি অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার কাঙ্ক্ষিত স্তর এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও আগামী বাজেটের অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে বাজেটের রূপরেখায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে উপস্থাপিত ৫টি বাজেট উপস্থাপনের দিন সংসদে অনুপস্থিত ছিল প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। অর্থমন্ত্রী মুহিত এবারও ডিজিটাল পদ্ধতিতে (পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে) বাজেট উপস্থাপন করেছেন। আর এ বাজেটকে কোনোভাবেই উচ্চাভিলাষী কিংবা বাস্তবায়নের অযোগ্য বলতে নারাজ অর্থমন্ত্রী। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় বাজেট দেয়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী গতবছরের ন্যয় এ বছরও বলেছেন, আমার বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে হাই গ্রোথ অ্যান্ড হাই ইনভেস্টমেন্ট। অর্থ্যাৎ বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনই এবারের বাজেটের মূল দর্শন। নতুন বাজেটে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতের জন্যও উদ্যোগের কথা আছে।