একদফা দাবি আদায়ে আসছে অসহযোগ ও হরতাল
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৫৩:১২,অপরাহ্ন ২২ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এক দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনকে বেগবান করতে চায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য সংলাপের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করে ২০ দল। তাই জোটের নেত্রী সরকারের কাছে বারবার সংলাপের আহবান জানিয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে সারা না পেয়ে একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্য ২০ দলীয় জোট অসহযোগ ও লাগাতার হরতারের দিকে যাচ্ছে জোটের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
২০ দলীয় জোট আগামী ১ ফেব্রয়ারী থেকে অসহযোগ আন্দোলন ও লাগাতার হরতাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। ২০ দলীয় জোট মনে করে এবার যে কোন মূল্যে সরকার পতন করে তাদের দাবি আদায় করা হবে। দেশব্যাপী টানা দু সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা অবরোধ কর্মসূচিকে আন্দোলনের প্রাথমিক সফলতা বলেই মনে করেছে বিরোধী জোটের নীতিনির্ধারকরা। রাজপথে অংশ নেয়া কর্মীদের এই মানোভাব বুঝতে পেরে হাইকমান্ড চলমান আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে চূড়ান্ত কৌশলও প্রণয়ন করছেন।
এদিকে দ্রুত নির্বাচনের ‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনে বাড়ছে রাজনৈতিক মিত্র। অল্প সময়ের মধ্যে মাঠে নামছে রাজনীতিতে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভূমিকা রাখতে সক্ষম এমন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা এই দলগুলো ইতোমধ্যে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সোচ্চার হয়েছে। নিজ নিজ দলীয় পরিম-লের বাইরে এখন তারা মনোযোগী হচ্ছে জোটগত আন্দোলনে। লক্ষ্য একইÑ দ্রুত সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন নিশ্চিত করা। বিএনপির হাইকমান্ডও আন্দোলন ‘ঐক্যবদ্ধভাবে’ এগিয়ে নিতে এসব দলের সাথে নিত্য যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে জানা গেছে।
অপর দিকে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন দমাতে হার্টলাইনে সরকার। ক্ষমতাসীনরা বলছে জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করতে যা যা করা দরকার তা করবে সরকার। যাদের গেস্খফতার করা হয়েছে তাদের সুনিদিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রয়োজনে বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করা হবে।
জানা গেছে, অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, ড. কামালের গণফোরাম, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের দাবিতে সোচ্চার। প্রতিটি দলই মনে করে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার পরিবর্তে ‘একতরফাভাবে’ হয়েছে। এর ফলে যে রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে, নতুন নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত তা নিরসন হবে না। এই পটভূমিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনের সাথেও তারা একমত।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, ধাপে ধাপে আন্দোলনকে আরও জোরালো করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনার বেশিরভাগই রাজধানী ও এর আশপাশের জেলাগুলো কেন্দ্রীক। আর এজন্য চলমান অবরোধ ও হরতাল কেন্দ্রীক পিকেটিংকে আরও জোরালো করতে দলের সব পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জেলার নেতাদের এ ব্যাপারে আলাদা নির্দেশনা দেয়া হয়। ঢাকা মহানগরসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারাও চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আন্দোলনকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে জোটের শীর্ষ নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন যে অনড় ও দৃঢ় সেই বার্তাও নেতাকর্মীরা বুঝে গেছেন। কারণ গুশশান কার্যালয়ের পুলিশি ব্যারিকেড সরানো হলেও আন্দোলনের স্বার্থেই বেগম খালেদা জিয়া কার্যালয়ের ভিতরেই অবস্থান করছেন। এটিকেও নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নতুন মাত্রা হিসেবেই দেখছেন।
বিরোধী জোট মনে করছে, সরকারের কঠোর অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই আন্দোলন সফল করতে হবে। সরকারের অপপ্রচার, আইন-শৃঙ্খলা বাহীনি দিয়ে দমন এসব মোকাবিলা করেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সরকার আরও কঠোর হবে এমনটা ধরে নিয়েই তারা আন্দোলনের পরবর্তী কৌশল চূড়ান্ত করে রেখেছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সেরকম দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ গ্রেফতার হলে যাতে তা থমকে না যায় সে বিকল্পও তারা প্রস্তুত রেখেছেন। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে কোন উপায়ে তা অব্যাহত রাখা হবে সে ব্যবস্থা আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছি সেখান থেকে ফিরতে চাচ্ছি না। এখান থেকে ফেরার উপায়ও নেই। আন্দোলন আরো জোরালো করা হবে। আন্দোলনটা এখন আর আমাদের হাতে নেই। এটা জনগণের কাছে চলে গেছে। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি করবে।
সহিংসতা’ বাদ দিয়ে বিএনপির চলমান আন্দোলন সমর্থন করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন। সরকার যেহেতু আলোচনার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে ‘গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তিদেরই সঙ্কট নিরসনের পথ তৈরি করতে এগিয়ে আসতে হবে। সে প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন এখন পর্যন্ত সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, চলমান আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে খালেদা জিয়া নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আন্দোলনের ‘ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম’ গঠনের ওপরও জোর দিচ্ছেন তিনি।