উদ্ধারের গল্পটি শোনালেন সেই নায়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪২:৪৫,অপরাহ্ন ২৯ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে হতাহতের ঘটনায় শোকে মুহ্যমান সারাদেশ। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের প্রচণ্ড চেষ্টা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবাইকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি।
গতকাল বিকেলের দিক থেকেই ফেসবুকে বেশ কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। তার মধ্যে একটি ছিল এক তরুণীকে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনার চিত্র। সে ছবিটাতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিসের এক যোদ্ধার পিঠের ওপর এক তরুণী। ছবিতেই স্পষ্ট- কতটা কাছ থেকে মৃত্যুকে দেখে ফিরলেন এই তরুণী। বেঁচে গেছেন তা নিশ্চিত হলেও ফেলে আসা আতঙ্ক তখনও তার শরীরে লেপ্টে আছে। ভয়ার্ত মুখে কাঁদছেন, ছবিতে সে শব্দ শোনা না গেলেও নাম না জানা ওই তরুণীর ভয়-আতঙ্ক ছড়িয়ে রয়েছে ছবিটা জুড়ে। তাকে টেনে নিয়ে আসছেন যে ব্যক্তি তার অভিব্যক্তিও হৃদয় ছুয়ে যাচ্ছে, শিহরিত করছে মানুষকে।
শুক্রবার নিউজের সঙ্গে কথা হয়েছে অগ্নিযোদ্ধা সেই নায়কের সঙ্গে। তিনি হলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) খন্দকার আবদুল জলিল।আব্দুল জলিল ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হলেও আগুনের ভয়াবহতা দেখে তাকে ছুটে যেতে হয় মানুষকে উদ্ধারে।
তিনি বলেন, টেলিভিশনে যখন দেখলাম আগুনের ভয়াবহতা এবং এখানে অনেক মানুষের জীবনের বিষয়…তখন আমরা মুভ করলাম ঘটনাস্থলের দিকে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল আমরা আগুন নেভানোর পাশাপাশি উদ্ধার কাজও চালিয়ে যাব।
আব্দুল জলিল বলেন, তখন তিনটি ল্যাডার ইউনিট দিয়ে আগুন নেভানো হচ্ছিল এবং আরেকটিতে আমি এবং আরেকজন ছিলাম। ওই ল্যাডার ইউনিটে নিয়ে যখন ১২ বা ১৩ তলায় পৌঁছালাম তখন একটি মেয়ে বাঁচান বাঁচান বলে কাঁদছিল। আমরা তাকে কিছুটা আগাতে বলি সে জানায় সে হাঁটতে পারবে না, তার পায়ে আঘাত রয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়েটা ভয়েও ছিল। সে শুধু একটা কথাই বলছিল আমার মা নিচে আছে, মায়ের কাছে যাব।
এরপর ওই তরুণীকে নিজের কাঁধে তুলে নেন আব্দুল জলিল। এ সময় সে খুব কান্নাকাটি করছিল। আমি তাকে হালকা করার জন্য জিজ্ঞাসা করি, কী করেন? সে জানায় চাকরি করেন। এরপর তার বাবা-মায়ের নাম জিজ্ঞাসা করলে সে বলে আমার মা নিচেই আছে। আব্দুল জলিল বলেন, মেয়েটি বাসায় চলে যেতে চাইলে আমি তাকে বলি প্রথমে হাসপাতালে যান, পরে বাসায় যাবেন।
ওই তরুণীকে উদ্ধারের স্থিরচিত্রটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার কারণে, আপনিও এখন ভাইরাল, মানুষের নায়ক- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষের জীবন রক্ষা করে আমরা তৃপ্তি পাই। এ ঘটনাও আমাকে তৃপ্ত করেছে। কিন্তু কেউ যদি মারা না যেত তাহলে আর কোনো অতৃপ্তি থাকতো না।
কেউ যদি মারা না যেত- আব্দুল জলিলের মতোই সারা দেশের মানুষও তাই চেয়েছিলেন, কিন্তু হয়নি। তবে যেই তরুণী বেঁচে ফিরেছেন আগুনে পোড়া ভবন থেকে আব্দুল জলিলের কাঁধে চেপে, এক হাত দূর থেকে দেখে এসেছেন মৃত্যুকে, খুব কাছ থেকে শুনে এসেছেন মৃত্যুর ডাক, তিনি জানেন আব্দুল জলিলের সেই স্বপ্ন পূরণ না হলেও তার কী পূরণ হয়েছে।