ইন্টারনেট বনাম মানবাধিকার
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:১৮:৩০,অপরাহ্ন ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪
তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক:: মানুষের প্রতিদিনের জীবন ব্যবস্থায় ইন্টারনেট এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ক্রমশ এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। এর ব্যবহারও এখন বহুবিধ। কিন্তু সামগ্রিকভাবে এটি এখনও মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ২০১২ সালের জুন মাসে জাতিসংঘ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগকে মানবাধিকারের অংশ হিসেবেও ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেটিও এখন পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথকে সুগম করতে ভূমিকা রাখতে পারে সুলভে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ।
আর এ কারণে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাকে অন্যতম মানবাধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে জনমত গড়ে উঠছে। এছাড়া এ মাধ্যমটিকে ব্যবহার করে বাধাহীনভাবে মুক্ত মতপ্রকাশের সুযোগ যাতে সীমিত হয়ে না যায়, সেজন্য ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণ একক কোনো দেশ কিংবা প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা উচিত নয় বলেও মনে করছেন ব্যবহারকারীরা। সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল গভর্ন্যান্স ইনোভেশন (সিআইজিআই) উদ্যোগে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইপসসের পরিচালিত এক জরিপের ফলাফলে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। সম্প্রতি কানাডার অটোয়ায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠান দুটি।
বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। সেবা থেকে শুরু করে প্রায় সব খাতই এখন ইন্টারনেটভিত্তিক। তাই সেবাটিকে সর্বজনীন করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, মিসর, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রেট ব্রিটেন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কেনিয়া, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, তিউনিশিয়া, তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর জরিপ চালায় সিআইজিআই ও ইপসস। চলতি বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বরের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়।
ইন্টারনেট নিরাপত্তা ও আস্থা বিষয়ে দেশগুলোর ২৩ হাজার ৩৭৬ জনের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। এতে অংশগ্রহণকারীদের ৮৩ শতাংশই জানায়, সুলভে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। বিশ্বের সব অঞ্চলের মানুষেরই এ সেবা ব্যবহারের অধিকার রয়েছে বলে মনে করেন তারা। ৮৭ শতাংশ মনে করে, আগামীতে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হতে যাচ্ছে ইন্টারনেট। ৮৫ শতাংশ মনে করে, সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে পরিণত হতে যাচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগই মনে করেন, তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ইন্টারনেটে সুরক্ষিত নেই। মাত্র ৩৬ শতাংশ মনে করে, সুরক্ষিত রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ ধরনের প্রতিবেদন ইন্টারনেটের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
এদিকে তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে পারিবারিক জীবন যেন অনলাইনে অভিবাসী হয়ে পড়েছে এবং অবাধ মতপ্রকাশের নতুন ক্ষেত্র হিসেবে ইন্টারনেট আবির্ভূত হয়েছে। এমতাবস্থায় ব্যবহারকারীদের অনলাইন থেকে দূরে রাখাটা খোদ আদালতের পক্ষেও কঠিনতর হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে ‘ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার একটি মানবাধিকার কি না’- সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ইন্টারনেটের কিছু কিছু সাইটকে ব্লক করা কিংবা সেগুলোতে সীমাবদ্ধ প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে সমর্থন জ্ঞাপন করা হলেও প্রতিবেদনের শেষদিকে উপসংহার টানতে গিয়ে বলা হয়েছে, ইন্টারনেট জগতে প্রবেশের ক্ষেত্রে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে তা ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনের’ ১৯ নং অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে।
সম্প্রতি ব্রিটেনের আপিল আদালত জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের প্রতি তাদের পরোক্ষ সম্মতি জ্ঞাপন করেছে। ‘রেজিনা বনাম স্মিথ অ্যান্ড আদারস’ নামক মামলায় ‘যৌন অপরাধ আইন ২০০৩’ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আদালত বলেছেন, ইন্টারনেট এখন আমাদের প্রতিদিনের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর ব্যবহারের ওপর পরিপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ কখনোই সমীচীন নয়।