ইউএস-বাংলা ট্র্যাজেডির এক বছর: এখনো আটকে আছে ক্ষতিপূরণ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৬:৪১,অপরাহ্ন ১২ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার এক বছর আজ। ঢাকা থেকে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ দুপুরে কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানটি। আরোহীদের ৫১ জনের মৃত্যু হয়, যাদের ২৭ জনই ছিলেন বাংলাদেশি আর ২২ জন নেপালি। নিহতের মধ্যে বিমানের পাইলট আবিদ সুলতান এবং কো-পাইলট পৃথুলা রশীদও ছিলেন।
কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার এক বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলটের ভুল সিদ্ধান্ত এবং আচরণকে দায়ী করে নেপালের তদন্ত কমিটি। নেপালের তদন্তে বলা হয়, পাইলট ককপিটে বসে ধূমপান করছিলেন। দুর্ঘটনার আগে ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ অবস্থায় ছিলেন ফ্লাইটে থাকা পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান। ঘটনার সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি ‘সাড়া’ দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
নেপাল সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির এ রিপোর্ট শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশি তদন্তকারী ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ। তিনি বলেন, এ রিপোর্টে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের ভুল এবং ব্যর্থতাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার আগে বিমানের ক্যাপ্টেন ও বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) মধ্যেকার কথোপকথন হয়।এতে এটিসির গাফিলতি ছিল। পাইলটদের সঙ্গে এটিসি টাওয়ারের ল্যান্ডিংয়ের আগের কথোপকথনে ছিল রানওয়ের কোন দিক থেকে পাইলট ল্যান্ড করবেন। পাইলটদের ভুল বার্তা দেওয়া হয়। এসব তথ্য তাদের তদন্ত রিপোর্টে বিবেচনায় আনা হয়নি।
এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেসটিগেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ (এএআইজি-বিডি) প্রধান ক্যাপ্টেন সালাহ্উদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বলেন, নেপালের তদন্ত প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে তা ঠিক আছে। তবে পাইলটকে একপেশেভাবে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু এটিসির যে ত্রুটি ছিল এগুলো উঠে আসেনি। পাইলট ল্যান্ড করতে অ্যাপ্রোচ মিস করেছিলেন। কিন্তু এটিসি পাইলটকে সহায়তা করতে পারত, কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। বরং বিমানটি যখন এটিসি টাওয়ারের কাছ দিয়ে গিয়ে বিধ্বস্ত হয় তখন এটিসি টাওয়ারের কর্মকর্তারা টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার এক বছর উপলক্ষে বারিধারায় ইউএস-বাংলার কার্যালয়ে বাদ জোহর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। নিহত ও আহতদের জন্য দোয়া করা হবে।
এদিকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। তবে নিহত ও আহত যাত্রীদের মধ্যে ৩১ জনকে বিমা পরিশোধ বা ক্ষতিপূরণ দিলেও বাকি ৪০ জনের ক্ষতিপূরণ এখনো বুঝিয়ে দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানি ও এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন জটিলতার কারণেই ৪০ জনের বিমার অর্থ পরিশোধ করতে দেরি হচ্ছে বলে জানান এয়ারলাইন্সটির এক কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার চার সপ্তাহের মধ্যে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সকে বিমানটির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়। এছাড়া নিহতদের স্বজনদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫১ হাজার ১২০ ডলার নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। তবে আহতদের ক্ষতির পরিমাণ, চিকিৎসা ব্যয় সবকিছু বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হয়েছে। নিহত ১৯জন বাংলাদেশির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে নিহত আটজনের পরিবার এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহত ৯জন বাংলাদেশির মধ্যে ছয়জনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তিনজন এখনও পাননি। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা খরচ ছাড়াই বাংলাদেশি ২৫ জন আহত-নিহতদের পরিবারকে ১১ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৬ টাকা দিয়েছে সেনা কল্যাণ ইনস্যুরেন্স। নেপালের আহতরা এখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পাননি। নিহতদের মধ্যে ২ জনের পরিবারকে ৫১ হাজার ১২০ ডলার হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনায় আহত কবির হোসেন বলেন, ‘আমার দুটো পা চলে গেছে। আমার তিনটা ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে। বড় ছেলের লেখাপড়ায় এক বছর গ্যাপ হয়ে গেছে আমার জন্য। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য আমার খরচ করতে হয়, টেনেটুনে দিন যাচ্ছে। দ্রুত ক্ষতিপূরণ পেলে আমার উপকার হবে।’
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশন্স) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আহত-নিহতদের পরিবারকে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতেও আমরা সাহায্য করছি।’