আস্তিক-নাস্তিক সবাই থাকবে, সরকার নিজের ব্যর্থতা এড়াতে পারেননা
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫৮:৩৫,অপরাহ্ন ০১ মার্চ ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা বলেছেন বাংলাদেশে আস্তিক-নাস্তিক সবাই অবস্থান করতে পারবে, এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে। অপরদিকে, বিএনপির একজন নেতা বলেছেন ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব অন্যের উপর চাপিয়ে সরকার নিজের ব্যর্থতা এড়াতে পারবেনা।
আজ রবিবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নিয়ে তারা এসব মন্তব্য করেন।
সংলাপের এ পর্বে নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায় অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ড, ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ বা ধর্মানুভূতিতে আঘাত ছাড়াও চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও সাম্প্রতিক লঞ্চ দুর্ঘটনার বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসে।
এ পর্বে আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড: মসিউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শাজাহান ওমর বীর উত্তম, ইন্সটিটিউট অফ কনফ্লিক্ট,ল এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড: আমেনা মোহসিন।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শাজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণভাবেই পুলিশ, প্রশাসন ও সরকারের ব্যর্থতা।
তিনি বলেন, খুন যে করে সে খুনি, তার সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। কোন ধর্মে খুন করতে বলে? মানুষের জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার ব্যর্থ হয়েছে, পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। আনসারুল্লাহ বাংলা বা এদের উপর দায় চাপিয়ে লাভ হবেনা। সরকার অভিজিতকে সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারকে এর মূল্য দিতে হবে।
দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সরকার সমঝোতায় না এলে বিএনপির আন্দোলনও অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা তো আন্দোলন করবই জনগণের স্বার্থে। যদি আন্দোলন জনগণের স্বার্থে হয় তো তাঁরা অবশ্যই আমাদের সাথে থাকবে। আর যদি সেটা জন বিরোধী হয় তবে অবশ্যই আমাদের আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিবে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড: মসিউর রহমান বলেন সংলাপ বা মিটমাট করার কোন বিষয় নেই। বিএনপিকে বিদ্রোহী দল আখ্যায়িত করে তিনি বলেন সন্ত্রাসীদের কাছে মাথা নত না করে তাদের দমন করা হবে।
তিনি বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্য হল এই রাষ্ট্রকে ভেঙ্গে অন্য কোনরকম রাষ্ট্রে পরিণত করা। যারা অপরাধ করছে, তাদেরকে দমন করতে হবে। যারা রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে চায় তাদেরকে দমন করতে হবে।
অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ধর্মকে কটাক্ষ করার কোন ঘটনা ঘটেনি। এদেশে আস্তিক নাস্তিক সহ সব মতের মানুষ অবস্থানের ক্ষেত্রে যারা বাধা দিবে তারাই দোষী বলে বিবেচিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে গেছে সেটা সঠিক নয়। কিন্তু হত্যাকাণ্ড অবশ্যই গ্রহণযোগ্য নয়। এর তদন্ত হতে হবে এবং দোষী ব্যক্তিরা যেন শাস্তি পায়। আস্তিক-নাস্তিক সকলেরই এ পৃথিবীতে বাস করার অধিকার আছে। সে অধিকারকে স্বীকার করে নিতে হবে।যদি কেউ সে অধিকারটাকে স্বীকার না করে নেয় এবং যে তার সাথে একমত নয় তার জীবন নষ্ট করার চেষ্টা করে, সে দোষী। তাকে আমরা আমাদের সমাজে স্থান দেব না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্যানেল আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আমেনা মোহসিন বলেন বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে অন্যের মতামত সহ্য না করা এবং ভিন্নমতকে প্রশ্রয় না দেয়ার চর্চা চলছে। তিনি অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড এ ধরণের অসহিষ্ণুতার প্রতিফলন।
তিনি বলেন, ব্লগার মানেই যে নাস্তিক, বা ব্লগার মানেই যে আপনাকে আঘাত করছে সেটা ঠিক না। যারা ধর্ম পালন করছেন সবাইকে তো ঢালাওভাবে জঙ্গি বলে দিতে পারিনা। এ বাংলাদেশে কেন, পৃথিবীতে যেমন আস্তিকদের থাকার অধিকার আছে, নাস্তিকদেরও থাকার অধিকার আছে।
অপর প্যানেল আলোচক ইন্সটিটিউট অফ কনফ্লিক্ট,ল এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুর রশীদ বলেন আবদুর রশীদ বলেন ধর্মকে বিকৃত করে মানুষ হত্যার যে রাজনৈতিক প্রবণতা সৃষ্টি করা হচ্ছে সেটিকে নাগরিকদের না বলা উচিত।
তিনি বলেন, আদর্শগত ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ আক্রমণ করলে সেটি ঠেকানো খুব কষ্ট।
মেজর রশীদ বলেন, কোন উগ্র মতাদর্শ নিয়ে মানুষ হত্যার রাজনীতি করলে সেটাকে বলতেই হবে ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ, এবং তারাই খুন করছে। সবাইকে বোঝানো হয়েছে যিনি ব্লগ করেন তিনি নাস্তিক।
তিনি বলেন, অভিজিতের ব্লগে কখন ঢুকে দেখেছেন সে কি লিখেছে? সে বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা লিখত, সে তো ধর্মের বিরুদ্ধে লিখত না। কিন্তু আমাদেরকে বলা হচ্ছে ব্লগার মানেই নাস্তিক, এদেরকে মারো।