‘আসল’ বিএনপির মুখপাত্র দাবিকারী ব্যক্তিটি আসলে কে?
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৫:৩৬,অপরাহ্ন ১৬ জানুয়ারি ২০১৫
অনলাইন ডেস্ক:: সম্প্রতি বিএনপির ক্রান্তিকালীন রাজনীতির ‘মুখপাত্র’ দাবি করে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত ‘আসল’ বিএনপি গড়ার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন কামরুল হাসান নাসিম।
তিনি নিজেকে কৃষক দলের সদস্য বলেও দাবি করেছেন। মূলত নামটি সবার সমক্ষে আসে ২০১০ সালে ‘গড়বো বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের সরব আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে। এই সংগঠনের মুখপাত্র তিনি। বিএনপির প্রয়াত নেতা ওবায়েদুর রহমানের স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এমন শুনা গেলেও নাসিম নিজেকে এর প্রতিষ্ঠাতা মুখপাত্র দাবি করেছেন।
জননেতা ডটকম নামে একটি অনলাইন নিউজপোর্টালের এডিটর ইন চিফ নাসিম। সেই সুবাদে নিজেকে সাংবাদিক ও গবেষক পরিচয় দেন তিনি।
কামরুল হাসান নাসিম তার ফেসবুক প্রোফাইলে গ্রামের বাড়ি যশোর উল্লেখ করেছেন। চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি হাইস্কুলে তার পড়াশুনা, ‘গড়বো বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও মুখপাত্র। ২০১২ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার স্পেশাল এডিটর (বিশেষ সম্পাদক) ছিলেন।
জননেতা ডটকমের প্রিন্টার্স লাইনে উল্লেখিত মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে ফোনটি ধরেন কামরুল হাসান নিজেই।
জননেতা ডটকম পোর্টালের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জননেতা ডটকম ২০১৩ সালের আগস্টে তিনি শুরু করেন। এটা একটি বিশেষায়িত পোর্টাল। এর কার্যালয় বনানীতে। বারিধারায় জননেতা রিসার্চ সেন্টার নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে সমসাময়িক রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও উন্নততর রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা হয়। আট দশজনকে নিয়ে সেই রিসার্চ টিম তিনি তার চিফ কোরঅর্ডিনেটর।
জননেতা ডটকমের মালিক ড. শাহেদা ওবায়েদ এমন কথা শুনা গেলেও তিনি তা অস্বীকার করেন। তার দাবি, এটি তিনি নিজ খরচেই চালান।
তার অতীত কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কানদারের মালিকানাধীন ইসলামিক টিভির ‘লাল সবুজের বাংলাদেশ’ টকশো অনুষ্ঠানে তিনি সঞ্চালক ছিলেন। চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে বর্তমান সরকর। এর আগে এস টিভির ‘জনস্বার্থে জননেতা’ অনুষ্ঠানও তিনি সঞ্চালক ছিলেন। এই চ্যানেলটিও এখন বন্ধ।
কামরুল হাসান দাবি করেন, তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ২০০২ সালের নির্বাচনে তিনি যশোর থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু জোটের স্বার্থে আসনটি জামায়াতকে দেয়া হয়। যদিও এরপরই এক এগারোর ঘটনা ঘটে। মূলত এরপরই রাজনীতি থেকে সরে যান তিনি এবং বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।
২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘গড়বো বাংলাদেশ বিপ্লবী সংগঠন’ সংবাদ সম্মেলন করে দুই নেত্রীর অবসর দাবি করে। সেবছর ২১ ফেব্রুয়ারিতেই তাদের অবসরের আলটিমেটাম দেয়া হয়। এসময় ‘গড়বো বাংলাদেশ’ সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলেন কামরুল হাসান নাসিম।
এ সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. শাহেদা ওবায়েদ, সংগঠনের সদস্য মহিবুল আলম লিটন, শামসুল আলম, এড. আবুল খায়ের প্রমুখ।
এর আগে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর পল্টন ময়দানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয় গড়বো বাংলাদেশ। এ নিয়ে সারা ঢাকায় রঙিন পোস্টারও ছাপা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সমাবেশ হয়নি।
বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত কেএম ওবায়েদুর রহমানের স্ত্রী শাহেদা ওবায়েদ। তিনি ঢাকা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এবং তিতুমীর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। গত কয়েক বছর ‘গড়বো বাংলাদেশ’ সংগঠনের ব্যানারে রাজধানীতে বিভিন্ন সভায় যোগ দিয়েছেন।
ফরিদপুরের নগরকান্দা আসনের নেতা ছিলেন প্রয়াত ওবায়েদুর রহমান। এখন তার মেয়ে শামা ওবায়েদ সেখানে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। গুঞ্জন আছে, শাহেদা ওবায়েদ এবং মেয়ে শ্যামা ওবায়েদ দু’জনই ওবায়েদুর রহমানের আসন থেকে বিএনপির নমিনেশন চেয়েছিলেন। কিন্তু, শামা ওবায়েদ নমিনেশন পান। ক্ষুব্ধ হয়ে শাহেদা ওবায়েদ বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে দেন এবং ‘গড়বো বাংলাদেশ’ এর সঙ্গে যুক্ত হন।