আপাতত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাচ্ছে না কলেজগুলো!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৪৮:১১,অপরাহ্ন ২৬ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর অনেক অভিযোগ। সেশনজট, শিক্ষার মানের সঙ্কটসহ আরো কত কি! এসবকে দূর করতে প্রায় দুই যুগ পর আবারো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত ও অনার্স কোর্স চালু থাকা সরকারি কলেজগুলো। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক, এ কাজ সম্পাদন করতে প্রথমে উঠে পড়ে লাগলেও এখন চলছে ঢিমেতালে। কবে নাগাদ এ প্রক্রিয়া শেষ হবে তারও কোনো নির্দিষ্ট সময় জানাতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এমনি কি তাদের বক্তব্যও পরষ্পরবিরোধী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ইউজিসি’র মাধ্যমে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়ার কাজটি সম্পাদন হবে। এর জন্য আট সদস্যের একটি কমিটিও করা হয়েছে। আর ইউজিসির বক্তব্য, ওই কমিটির কর্মাকাণ্ড বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
এর মধ্যে নিজেদের প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছরের জানুয়ারি গুচ্ছ শিক্ষাসূচি ঘোষণার পর সোমবার প্রথমবারের মতো সমবর্তনের তারিখ ঘোষণাসহ আগামী শিক্ষাবর্ষের দিনক্ষণও ঠিক করেছে তারা। এর ফলে সরকারি কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এ পর্যায়ে সরকারি কলেজগুলো পুরোনো অভিভাবকের সঙ্গে থাকবে না নতুন অভিভাবকের কাছে যাবে- সে চিন্তায় শিক্ষা কার্যক্রমে পড়েছে ভাটা।
বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা বলেছেন, তারা এখন কার অধীনে যাবে, তা নিয়ে অধীক চিন্তায় রয়েছেন। ফলে শিক্ষা কার্যক্রমে এর কু-প্রভাব পড়ছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার কলেজ রয়েছে। এরমধ্যে ১৮১টি সরকারি কলেজ এবং প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী। গত বছরের ৩১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনার্স কোর্স চালু আছে সেই সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার নির্দেশ দেন। যদিও ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগ পর্যন্ত কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই ছিল। পরে কলেজগুলোর দেখভালের দায়িত্ব পায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখভাল করার জন্য ইউজিসিকে দায়িত্ব দেয়। ইউজিসি ইতিমধ্যে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করে এবং কিভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া হবে তার পরিকল্পনা প্রণয়নে আট সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করে। কিন্তু কমিটি কিছুদিন এ বিষয়ে আলোচনা করে থেমে যায়। ফলে আটকে থাকে এ প্রক্রিয়া। বরং নতুন করে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘এটা আসলে বেশ জটিল বিষয়। কারণ, এখানে আইন সংশোধনের বিষয়টি যুক্ত রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশপাশি প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের লোকবল নিয়োগেরও বিষয় রয়েছে।’
বর্তমান অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আট সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। তারা রিপোর্ট দেয়ার পর আমরা কাজ শুরু করবো।’
কবে নাগাদ প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আশা করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, এটা একটা বড় কাজ। এ কাজে সময় লাগবে। কতদিন লাগবে সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।’
তবে এ বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন সরকারি কলেজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম। সোমবার তিনি বলেন, ‘সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে কোনো কাজই হচ্ছে না। আমরা এ বিষয়ে প্রথমে কিছুদিন কাজ করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তির মুখে কাজটি বন্ধ রাখি। এখন এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে তা সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছি। সরকার যদি চায় কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাবে, না চাইলে যাবে না।’
এদিকে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের সব সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে না নেয়ার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেন, ‘সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নেয়ার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে আবার বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে নতুন সমস্যার উদ্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যাপক সংস্কার করে সরকারি কলেজগুলোকে তার অধীনেই রাখা হোক।’