আজ মৌলভীবাজার হানাদারমুক্ত দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৭:১৭,অপরাহ্ন ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: আজ সোমবার ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার হানাদারমুক্ত দিবস। ’৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন সেক্টর ৪ এর কমাণ্ডার মেজর সি.আর দত্তের নেতৃত্বে মৌলভীবাজারের মুক্তিযোদ্ধারা ৬ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহরকে পাক হানাদারমুক্ত করেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ড সূত্র জানায়, তৎকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীরা মহকুমা সদরের পরিত্যক্ত পর্যটন রেস্ট হাউস, কলেজ, পিটিআই ও সার্কিট হাউস ক্যাম্পে অবস্থান করে তাদের যুদ্ধ পরিচালনা করে। ৬ ডিসেম্বর কুলাউড়া, শমশেরনগর ও শ্রীমঙ্গল রোড থেকে মিত্র বাহিনী, ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেন। ওই রাতেই শহরের পার্শ্ববর্তী কালেঙ্গা পাহাড়ি এলাকা থেকে ভারী অস্ত্র দিয়ে হানাদারদের ঘাটিতে গোলাবর্ষণ চালানো হয়। এভাবে প্রবল আক্রমণের মুখে পাক হানাদার বাহিনীর তৎকালীন কমাণ্ডার রানা ৭ ডিসেম্বর রাতে তার বাহিনী নিয়ে রাতের আঁধারে শেরপুরের দিকে পালিয়ে যায়। পরদিন ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় সাবেক কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা, বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক আজিজুর রহমান ও মির্জা আজিজ বেগ’র নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী, ইপিআর, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনতা মিলে তৎকালীন মহকুমা হাকিমের বাসভবনের সামনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এ উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মৌলভীবাজার জেলা ইউনিট কমাণ্ডের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজার জেলার রয়েছে ঐতিহাসিক গৌরবময় ভূমিকা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল, সমগ্র দেশ মুক্ত হয়ে যায়। ৮ ডিসেম্বর এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় মৌলভীবাজার। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ হামলার প্রতিরোধের মুখে চরমভাবে বাঁধা পেয়ে পাকসেনারা পিছু হটতে থাকলে বিজয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ডিসেম্বরের ২ তারিখ রাতে জেলার পূর্ব সীমান্তে শমশেরনগর বিমানবন্দর ঘাঁটি ও চাতলাপুর বিওপিতে হানাদারদের ওপর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ শুরু হয়। তীব্র আক্রমণের মুখে শত্রুসেনারা দাঁড়াতে না পেরে মৌলভীবাজার শহরে তাদের ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারে ফিরে যায়। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী মৌলভীবাজার দখলের উদ্দেশ্যে ৪ ডিসেম্বর বিকেলে শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে কালেঙ্গা পাহাড়ে এসে জড়ো হন। এখানে বড়টিলা এলাকায় পাকিস্তানিদের সাথে তাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর অন্তত ১২৮ জন সেনা শহীদ হন। ৫ ডিসেম্বর থেকে হানাদার বাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে তারা ব্যর্থ হয়।
পরাজিত পাকিস্তানি সৈন্যরা তখন সিলেট অভিমুখে শেরপুরে হয়ে পালাতে যাওয়ার সময় তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে সেখানকার বহু সাধারণ মানুষ নিহত ও জখম হয়। পরবর্তীতে শেরপুরে অবস্থান নিরাপদ নয় মনে করে সিলেট চলে যায়। পাকবাহিনীর পিছু হটার ফলে ৮ ডিসেম্বর পুরো মৌলভীবাজার হানাদারমুক্ত হয় এবং আকাশে ওড়ে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা।
মৌলভীবাজারের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ, বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ৮ ডিসেম্বর নিজ জেলা মৌলভীবাজার তথা সারা দেশ পর্যায়ক্রমে মুক্ত করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় লাভ করে ।
৮ ডিসেম্বরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জেলার-রাজনগর-৩ আসনের এমপি ও মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসীন আলী জানান, ২৯ নভেম্বর ১৯৭১ সাল। ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে পূর্বের পরিকল্পনানুযায়ী চাতলাপুর বিওপি, আলীনগর বিওপি ও টিলাবাড়ী কালিপুর থেকে ২ ব্যাটারি আর্টিলারি গান দিয়ে চাতলাপুর আলীনগর সরাসরি ও অন্যদিকে কমলপুর থেকে ধলই-কুরমা যৌথভাবে আক্রমণ করি। ফলে পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৮ ডিসেম্বর পুরো জেলাটি মুক্ত হয়ে যায়। পুরো জেলা তখন জয়বাংলা শ্লোগান আর লাল সবুজ পতাকা উড়তে থাকে। তিনি আরও বলেন, অবিলম্বে বিজয় মাসে যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করতে হবে ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।