আজ মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯১তম জন্মবার্ষিকী
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৫০:১৩,অপরাহ্ন ২৩ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
আজ শুক্রবার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯১তম জন্মজয়ন্তী। অমৃতাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ’ রচয়িতা মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের এইদিনে যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদ সংলগ্ন সাগরদাঁড়ী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা রাজনারায়ণ দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী। অসামান্য মেধার অধিকারী আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম অগ্রপুরুষ মধুসূদন দত্ত ব্যক্তি জীবনে ছিলেন খেয়ালি আর বিলাসপ্রিয়। যশ খ্যাতির মোহ আচ্ছন্ন মধুসূদন দত্ত হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ১৮৪৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করে নামের আদ্যে যুক্ত করেন মাইকেল। তত্কালীন হিন্দু সমাজের ভিতর তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তিনি হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। মাদ্রাজে থাকাকালে নীলকর ডুগাল্ট্ ম্যাকটাভিসের আশ্রিত কণ্যা রেবেকা ম্যাকটাভিসকে বিয়ে করেন।
শিক্ষাজীবনে মধুসূদন গ্রিক, ফার্সি, জার্মান, ল্যাটিন, সংস্কৃত ভাষাসহ বহুভাষা রপ্ত করেন। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের এ অমূল্য সম্পদ মহাকাব্য মেঘনাদবধ ছাড়াও রচনা করেন কাব্য তিলোত্তমা সম্ভব, ব্রজাঙ্গনা, বীরঙ্গনা চতুদর্শপদী কবিতাবলী, নাটক শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবর্তী, কৃষ্ণকুমারী, মায়া কানন, প্রহসন বুড়োশালিকের ঘাড়ে রোঁ একেই কি বলে সভ্যতা, ইংরেজি কাব্য দি ক্যাপটিভ লেডি প্রভৃতি মধুসূদনের অমর সাহিত্য কর্ম। মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ সালে ২৯ জুন কলকাতস্থ আলীপুরের জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেন্ট জেমস চার্চ এবং ধর্মযাজকের উদ্যোগে খৃষ্টিয় রীতি অনুযায়ী কলকাতার লোয়ার সার্কুলার রোডের সমাধিস্থলে যথাযোগ্য মর্যাদায় কবির মরদেহ সমাধি করা হয়। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের যুগ প্রবর্তক কবি। তিনি বলেন, উনিশ শতকে বাঙালি নবজাগরনের অন্যতম পথিকৃৎ মধুসূদন তার অনন্য সাধারণ প্রতিভা দিয়ে বাংলা ভাষার অন্তর্নিহিত শক্তি আবিষ্কার করে এ ভাষা ও সাহিত্যের যে উৎকর্ষ সাধন করেন, তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিরল। তিনি বলেন, কিংবদন্তিসম প্রবাদপ্রতিম এ মহাকবি বাংলা সাহিত্যকে অমরত্ব দান করেছেন স্বমহিমায়। তিনি আরও বলেন, বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্ব সাহিত্যের অঙ্গন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মুখরিত করেছেন তার দৃপ্ত পদচারণায়, অসামান্য সৃজনশীলতায়। মাতৃভাষার সাথে ইংরেজী সাহিত্যেও তার সৃষ্টি সম্ভার অপার বিস্ময়ে ও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করা হয়।
আবদুল হামিদ বলেন, মধু কবির সাহিত্যবোধের স্ফুরণ প্রাচ্য ও পাশ্বাত্যের ভাবাদর্শের সম্মিলন নবপ্রজন্মের পাঠক সৃষ্টিতে এক অনন্য ভূমিকা রেখেছে। তিনি ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও চতুর্দশপদী কবিতার শ্রষ্টা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯১তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কালজয়ী কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও যশোর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় কবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে সপ্তাহব্যাপী ‘মধুমেলা’ ২০১৫ উদযাপনের আয়োজনকে তিনি স্বাগত জানান। তিনি ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষের জন্মজয়ন্তী ও মধুমেলা ২০১৫-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন , প্রবাদ পুরুষ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনন্য সাহিত্যকীর্তি আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের মহামূল্যবান সম্পদ। তিনি বাংলা ভাষায় মহাকাব্য রচনা এবং বাংলা কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তনের পথিকৃৎ। তিনি কবির জন্মবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের নাটক, প্রহসন, মহাকাব্য, পত্রকাব্য, সনেট, ট্র্যাজেডিসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অমর সৃষ্টি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর জন্মস্থান যশোর জেলার সাগরদাঁড়িতে ‘মধুমেলা’র আয়োজন করা হয়েছে জেনে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে মধুমেলা ২০১৫ এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।