আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৪৩:১৬,অপরাহ্ন ০৭ এপ্রিল ২০১৫
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস’ পালিত হচ্ছে। এবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘নিরাপদ পুষ্টিকর খাবার : সুস্থ জীবনের অঙ্গীকার’।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগের হাত থেকে রক্ষায় নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। সে লক্ষ্যে এবারের বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যটি খুবই যথার্থ।
প্রতিপাদ্য অনুযায়ী জনসাধারণের মধ্যে অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ কমাতে অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ হ্রাসের কোনো বিকল্প নেই। খাদ্য উৎপাদন, বিপণন, সংরক্ষণ, প্রস্তুতকরণ ও গ্রহণের যেকোনো পর্যায়ে খাদ্য অনিরাপদ হতে পারে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে সকল স্তরের খাদ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ভোক্তা, আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থাসহ সকলের ব্যাপক সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
দেশে বর্তমানে খাদ্য ভেজালে ফরমালিন ও কার্বাইড ব্যবহৃত হচ্ছে। খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্যের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে ক্যানসার ও কিডনি নষ্টসহ মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। দেশের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তায় যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিষয়ক পর্যবেক্ষক মহল।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে এবারের প্রতিপাদ্যকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকার জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ব্যাপক কর্মকা- বাস্তবায়ন করছে। দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছেও এর সুফল পৌঁছে গেছে। ফলে রোগ-ব্যাধির প্রকোপ কমেছে, মা ও শিশুমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ।
এ উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জনগণের সার্বিক স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে তার সরকার দেশব্যাপী নানামুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক সাফল্যের সাথে কাজ করছে, যা ইতিমধ্যে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপজেলা ও জেলা হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। তার সরকারের নেওয়া এ সকল পদক্ষেপের সুফল এখন জনগণ পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদেরকে পুরস্কৃত করেছে।’
এদিকে, দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য বিষয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেমিনার আয়োজন, স্যুভেনির প্রকাশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদর্শনী, জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ, সড়কদ্বীপ সজ্জিতকরণ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, জারিগান, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে অনিরাপদ খাদ্যগ্রহণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার উপর আলোচনা অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য কার্যক্রম।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত এ অনুষ্ঠান মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তত্বাবধানে স্থানীয় পর্যায়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ২০১৫ উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৯ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে শুরু হচ্ছে। ‘রিয়ালাইজিং ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ (ইউএইচসি) গোলস: এন ইন্টারন্যাশনাল পলিসি এ্যান্ড সলিউশন কনফারেন্স’ আগামী ৯-১১ এপ্রিল রাজধানীর হোটেল র্যাডিশন ব¬ু’তে অনুষ্ঠিত হবে। রকফেলার ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি), বাংলাদেশ ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, ব্র্যাক এবং আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে এ কনফারেন্সের আয়োজন করছে। কনফারেন্স উপলক্ষে আয়োজক সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জেও এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার, বেলা ১১.০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দেশের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা ও উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি কর্মকর্তা ও সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন কেবল স্বাস্থ্য বিভাগের বিষয় নয়। স্বাস্থ্যরক্ষা ও উন্নয়নে সকল সেক্টর, বিভাগ, সাংবাদিক, সকল পৌরকর্মী, বেসরকারি সংস্থা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা ও কর্মীবৃন্দ, সিভিল সোসাইটি, সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ তথা সকলকে এগিয়ে এসে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০১৫ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই আহবান জানান।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে চিকিৎসকদেরকে গ্রামে থেকে মানুষকে চিকিৎসা প্রদানে উৎসাহিত করতে সরকার নিরলস প্রয়াস চালাচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে কোনো রকম দুর্নীতি বা অনিয়ম রোধে আমরা বদ্ধপরিকর। যখনই কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠে তখনই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।