অস্ট্রেলিয়ার নাটকীয় জয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩১:৫৮,অপরাহ্ন ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪
স্পোর্টস ডেস্ক::
অ্যাডিলেডে নাথান লায়নের বোলিং নৈপুণ্যে প্রথম টেস্ট জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। এদিকে বিরাট কোহলির অসাধারণ এক ইনিংসে ভর করেই ভারত যখন অ্যাডিলেড টেস্টে এক ঐতিহাসিক জয়ের স্বপ্ন দেখছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই নাথান লায়নের বলটি ডিপ মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন তিনি! ভারতীয় অধিনায়ক যদি শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে যেতে পারতেন, তাহলে নিশ্চয়ই শেষ হাসিটা হাসতে পারত তার দলই।
তীরে এসে তরি ডোবা তো একেই বলে, তাই নয় কি! অস্ট্রেলিয়ার বেঁধে দেয়া ৩৬৪ রানের লক্ষ্যমাত্রাকে হাতের নাগালেই এসে ফেলেছিল ভারত। রান তাড়া করতে নেমে খুব দ্রুতই ২টি উইকেট হারিয়ে বসার পর বিরাট কোহলি আর মুরলি বিজয়ের অসামান্য এক জুটিতেই খেলাটা নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছিল ভারত।
এই দুই ব্যাটসম্যানের ১৮৫ রানের যুগলবন্দী অস্ট্রেলিয়াকে ফেলে দিয়েছিল দারুণ চাপের মধ্যেই। কিন্তু সেই জুটি ভেঙে চাপকে জয় করেই অ্যাডিলেডে শেষ অবধি বিজয় স্তম্ভে অস্ট্রেলিয়া। আর চাপ জয় করতে না পারার দুর্বলতার কারণেই এমন অসাধারণ লড়াইয়ের পরেও পরাজয়ই সঙ্গী হল ভারতের।
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে টার্নিং পয়েন্ট বলা চলে তিনটি। প্রথমে ‘নড়বড়ে নব্বইয়ে’র শিকার মুরলি বিজয় যখন ৯৯ রানে নাথান লায়নের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরলেন, দ্বিতীয়ত, অজিঙ্ক রাহানে যখন আম্পায়ারের একটি বাজে সিদ্ধান্তের শিকার হলেন, আর তৃতীয়ত, বিরাট কোহলি যখন নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন ব্যক্তিগত ১৪১ রানে।
এই তিনটি ঘটনার মিলিত যোগফলেই অ্যাডিলেডে বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া। তবে টার্নিং পয়েন্টের বাইরে অস্ট্রেলীয় স্পিনার নাথান লায়নের অসমান্য বোলিং এই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে স্পষ্টভাবেই। স্পিন খেলার রাজা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে লায়নের ১৫২ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট তুলে নেয়া যে কোনো বিচারেই এক অসামান্য পারফরম্যান্স হিসেবেই বিবেচনায় আসবে বেশ অনেক দিনই।
পঞ্চম দিনের প্রথম থেকেই ব্যাট করেছে ভারত। ৩৬৪ রানের লক্ষ্যমাত্রাটা ছোঁয়ার লক্ষ্য ভারতের সবসময়ই ছিল। পুরো ইনিংসে কখনোই অমীমাংসার শরীরী ভাষা ভারতীয়দের মধ্যে দেখা যায়নি। দলীয় ১৬ রানে শিখর ধাওয়ান ও ৫৭ রানে চেতেশ্বর পূজারার ফেরাটা জয়ের লক্ষ্যে বড় ধাক্কা দিয়ে গেলেও মুরলি বিজয় আর বিরাট কোহলি সেই ধাক্কা সামলে ওঠেন বেশ সহজেই। তাদের দু’জনের জুটি রীতিমতো অসহায় করে ছেড়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বোলিং।
পেস-স্পিন কোনো কিছুতেই আটকানো যাচ্ছিল না অসাধারণ খেলতে থাকা এই দুই ব্যাটসম্যানকে। মুরলি বিজয় ২৩৪ বল খেলে ১০টি চার ও দুটি ছয়ে ৯৯ রান করে ফেরেন লায়নের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে। যে শটটি খেলতে গিয়ে বিজয় এলবি’র ফাঁদে পড়েন, একজন সেট ব্যাটসম্যান হিসেবে অমন শট তিনি না খেললেও পারতেন। বিজয়ের ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই আম্পায়ারের একটা বাজে সিদ্ধান্তের শিকার হন অজিঙ্কা রাহানে।
লায়নের বলেই তিনি শর্ট লেগে রজার্সকে ক্যাচটি দেন, সেটা আম্পায়ার ‘ইনসাইড এজ’ মনে করলেও টেলিভিশন রিপ্লেতে দেখা গেছে বল রাহানের ব্যাটেই লাগেনি। এই দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্তই মূলত ভারতীয় দলকে ফেলে দেয় বিরাট এক মানসিক চাপের মধ্যে। উইকেটের অপরপ্রান্তে বিরাট কোহলি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট চালিয়ে গেলেও কোহলির অন্যপ্রান্তে কোনো ব্যাটসম্যানকেই আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি।
রোহিত শর্মার ওপর ভরসা ছিল কিন্তু উইকেটে পা রাখার প্রথম থেকেই তিনি এক বেশি স্নায়ুর চাপে ভুগছিলেন যে যেকোনো সময় তার ফেরাটা অবশ্যম্ভাবীই মনে হচ্ছিল। বাজে শট খেলে আউট হয়েছে ঋদ্ধিমান সাহা। লায়ানের বলেই তিনি যেভাবে ড্যান্সিং ডাউন দ্য উইকেট খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন, যেন মনে হচ্ছিল তিনি টেস্ট ম্যাচ নন কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ব্যাটিং করছেন।
ঋদ্ধিমান সাহার আউটটি সত্যিকার অর্থেই চাপে ফেলে দিয়ে যায় ভারতকে। বড় ইনিংস খেলে উইকেটে থাকা বিরাট কোহলিও রীতিমতো চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। খুব দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ব্যাটপ ছুঁড়তে থাকেন তিনি। সাত-আটটি দুর্দান্ত শট খেলে দল ও নিজেকে চাপ অনেটা কমিয়ে নিয়ে এলেও তার বিদায়টা ওই স্নায়ু চাপের কাছে হেরে গিয়েই হয়েছে।
কোহলি আউট হওয়ার পর ভারতের বাকী ব্যাটসম্যানরা ভেঙে পড়েন কাসের ঘরের মতোই। কর্ন শরমা, মোহাম্মদ শামি, বরুন অ্যারন আর ইশান্ত শমাদের কাছে যথেষ্ট কঠিনই লেগেছে লায়ন, জনসন, হ্যারিসদের বোলিং।
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৭ উইকেট লায়নের। এর পাশাপাশি মিচেল জনসনের ঝুলিতে গেছে ২ উইকেট আর রায়ান হ্যারিস নিয়েছেন একটি উইকেট।