অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর জেলায় কোন কলেজ সরকারিকরণ হয়নি
প্রকাশিত হয়েছে : ১:২৮:০১,অপরাহ্ন ২৮ মার্চ ২০১৫
লিয়াকত শাহ ফরিদী::
আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার প্রায় ছয় বছরে ৩ দফায় ৪০টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে সিলেট জেলায় কোন কলেজ স্থান পায়নি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২ দফায় স্ব স্ব পদে মন্ত্রী হলেও সিলেটের কোন কলেজকে সরকারিকরণের ক্ষেত্রে সাফল্য দেখাতে পারেননি। শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া সিলেটকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা মন্ত্রীদের থাকলেও কেন কোন কলেজ সরকারি করতে পারেননি তা কারোই বোধগম্য হচ্ছেনা। মন্ত্রী মহোদয়দের সিলেটের শিক্ষার উন্নয়নে আন্তরিকতার অভাব নেই একথা সত্য হলেও কেন এমন হচ্ছে এ প্রশ্ন এখন সিলেট জেলাবাসীর।
২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার ২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারিতে আবার ক্ষমতায় আসে। এই ছয় বছরে সরকার ৩ দফায় প্রথমে ১৩টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫টি ও সম্প্রতি ২২টিসহ মোট ৪০টি কলেজ সরকারিকরণ করেছে। এর মধ্যে ২২টি কলেজ সম্প্রতি সরকারিকরনের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর মধ্যেও সিলেট জেলার কোন কলেজের স্থান হয়নি। সূত্রমতে আরও ৬৪টি কলেজ সরকারিকরণের লক্ষ্যে যাচাই বাছাই চলছে। ওই গুলোর নাম জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে মোট ৩০৬টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৩টি কলেজ গোটা সিলেট বিভাগে। যেখানে রাজশাহীতে বিভাগে ৬৫টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬০টি সরকারি কলেজ রয়েছে।
সম্প্রতি সরকারিকরণকৃত প্রক্রিয়াধীন ২২টি কলেজের মধ্যে সিলেট বিভাগের মাত্র ২টি কলেজের স্থান হয়েছে। এগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ ও সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ।
অপর একটি সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরীর সুপ্রতিষ্ঠিত মদনমোহন কলেজ সরকারিকরণের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল। এতে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশও ছিল।
উল্লেখ্য অর্থমন্ত্রী নিজে ওই কলেজের গভর্নিং বর্ডির সভাপতিও। কিন্তু নতুন সরকারিকরণের তালিকায় মদনমোহনের কলেজের নাম না থাকায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন। দেশের মধ্যে সর্বপ্রাচীন বেসরকারি কলেজ মদনমোহন কলেজ। ১৯৪০ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীর এ কলেজটি সরকারি হওয়ার দাবী সিলেট বাসীর দীর্ঘদিনের।
এছাড়াও সিলেট বিভাগের বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজ, কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ, তাজপুর ডিগ্রি কলেজ, দিরাই ডিগ্রি কলেজ, জগন্নাথপুর ডিগ্রি কলেজ, ছাতক ডিগ্রি কলেজ, শচীন্দ্র ডিগ্রি কলেজ, আজমিরিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, রাজনগর ডিগ্রি কলেজ, কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ, মনতলা শাহজালাল কলেজ, বাহুবল কলেজ সহ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কলেজগুলোকে সিলেটের শিক্ষার উন্নয়নে সরকারিকরণ করা জরুরী বলে মনে করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেছেন, মদনমোহন কলেজের তথ্যগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাস্থানে পাঠিয়েছি। দেশের বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি কেন সরকারিকরণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি তা জানা যায়নি। আশাকরি সরকার বিষয়টি ভবিষ্যতে বিবেচনা করবেন। এছাড়াও সিলেটের অন্যান্য বেসরকারি কলেজগুলো সরকারিকরন করা প্রয়োজন বলে তিনি জোর দাবী জানান।
নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা আমাদের কলেজকে সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছি। গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড সফরের সময় আমরা এ দাবী জানাই। আমরা আশাবাদী। তবে সিলেটের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও সরকারিকরণ করা দরকার বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সিলেট জেলার দুইজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী থাকা সত্বেও সিলেট জেলার কোন কলেজ সরকারিকরণ না হওয়ার বিষয়টি খুবই দু:খজনক।