অবরোধে বরিশালে পরিবহন ব্যবসায় ধ্বস
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২০:২৫,অপরাহ্ন ১৭ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: টানা অবরোধে বরিশালের পণ্য পরিবহন ব্যবসায়ীদের পোয়াবাড়ো হলেও যাত্রী পরিবহন ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। সীমান্তবর্তী যশোর, বেনাপোলসহ ঢাকা থেকে কাঁচামাল, মুদিমনোহারী ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে ব্যবসায়ীদেরকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
অপরদিকে আমদানিকৃত পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান ও পিকআপ ভ্যানসহ পরিবহন না পাওয়ায় গুদামেই মজুত পণ্য নষ্ট হচ্ছে। এতে মোটা অংকের লোকসানের শিকার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী বাজার থেকে বরিশাল আড়ত পর্যন্ত ২০ টন পণ্য পরিবহনকারী একটি ট্রাকের নিয়মিত ভাড়া ছিলো ১৮-২০হাজার টাকা। কিন্তু অবরোধের কারণে এখন ভাড়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা।
বরিশাল আড়ত পট্টি ও অন্যান্য এলাকায় ঢাকা ও উত্তরাঞ্চল থেকে দৈনিক প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টন পণ্য আমদানি করা হয়। আমদানিকৃত পণ্যর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, আদাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আনা হয়। এসব পণ্য বরিশালের উপজেলাগুলোতে পাইকারী বিক্রয় করা হয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে।
বরিশাল নগরীর পিয়াজপট্টির আড়তদার ব্যবসায়ী এনায়েত হোসেন বলেন, নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে পণ্য আমদানি করায় পণ্যর দাম বেড়ে যাচ্ছে। একই সাথে পরিবহন না পাওয়ায় আমদানিকৃত পণ্য পাইকারদের কাছে সরবরাহ করতে না পারায় গোডাউনে পঁচে যাচ্ছে এবং এ পেশায় জড়িত শ্রমিকরাও কর্মহীন হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এধরণের ভোগান্তি নিয়ে তিনি আরো বলেন, কুষ্টিয়া, ভোমরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে পণ্য বোঝাই করার পর বরিশালে পৌঁছাতে ২-৩ দিন লেগে যায় এবং পথে অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। এতে পণ্য বোঝাই প্রতি ট্রাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা।
অবরোধে পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বাঘা বলেন, এসময় মালবাহী ট্রাক রাস্তায় নামলেই পিকেটাররা পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে ট্রাক জ্বালিয়ে দেয় । যে কারণে ক্ষতিপূরণকে মাথায় রেখেই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে যাত্রী পরিবহন ব্যবসায়ও ধ্বসের কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অবরোধের কারণে দিনের বেলায় দূরপাল্লার পরিবহন চলছে। ঢাকা-বরিশাল ও উত্তরাঞ্চলসহ ১৫টি রুটে দিনে রাতে প্রায় ২৫০টি বাস যাত্রী পরিবহন করে। এরমধ্যে ঢাকা, যশোর, বগুড়া, সিলেট, খুলনা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বরিশালের জেলা-উপজেলাগুলো থেকে দৈনিক প্রায় লক্ষাধিক যাত্রী আসা-যাওয়া করে।
অবরোধে যাত্রীবাহী বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের কারণে নিহতের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ভয়ে যাত্রীরা তাদের যাত্রা স্থগিত রেখেছে। বিভিন্ন স্পটে পার্কিং করা বাসে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। গত দুই দিনে নথুল্লাবাদ, গড়িয়ারপার, রুপাতলী এলাকায় ইগল, সাকুরাসহ সোনারতরী পরিবহনের তিনটি বাস পিকেটারা পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এমনকি ওত পেতে থাকা পিকেটাররা চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে বাস পুড়িয়ে দিচ্ছে। অধিকাংশ যাত্রী লঞ্চযোগে আসা-যাওয়া করছে।
যাত্রী পরিবহন ব্যবসায় ধ্বস নামার ব্যাপারে জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. আফতাব হোসেন বলেন, পরিবহন ব্যবসা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তায় গাড়ি নামালে যাত্রী হয়না। লোকসান এড়াতে গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছি। যাত্রীর চাপ বাড়লে রুটগুলোতে গাড়িও বাড়বে। সব মিলিয়ে যাত্রী পরিবহন ব্যাবসা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে দাবি আফতাব হোসেনের ।