অনলাইনে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি: খরচ দ্বিগুণেরও বেশি!
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩০:১৬,অপরাহ্ন ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: অনলাইনে সরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকেরা। ফরমের মূল্য বৃদ্ধির পর এবার টাকা জমা দিতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত চার্জ। এ ছাড়া অনলাইনে আবেদন পূরণেও চার্জ দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের। যারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত নন তারা পড়েছেন আরো হয়রানিতে। ফলে পদে পদে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে অভিভাবকদের। আর এর জন্য গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
অভিভাবকেরা জানান, অনলাইনে সরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন পূরণে অভিভাবকদের দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে। এবার প্রতিটি আবেদন ফরমের মূল্য ধরা হয়েছে ১৫০ টাকা। গত বছর এটি ছিল ১০০ টাকা। এবার অনলাইনে আবেদন পূরণে চার্জ দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা সাইবার ক্যাফেতে। আর বিকাশের মাধ্যমে ফরমের মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে অতিরিক্ত চার্জ হিসেবে আরো ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে দেড় শ’ টাকার আবেদন ফরম জমা দিতে অতিরিক্ত আরো দেড় শ’ টাকা গুনতে হচ্ছে। এ দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর ভর্তির নীতিমালায় বলেছে, সরকারি স্কুলে অনলাইনে ওয়েবসাইটের (www.dshe.gsa.edu.bd) মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফরম পূরণ, জমা, আবেদন ফরমের ফি অনলাইনে নিতে হবে।
অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন, স্কুল থেকে ভর্তি ফরম বিতরণ ও জমা দানের সুযোগ না দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আবেদন ফরম পূরণ, জমা ও আবেদন ফরমের ফি অনলাইনে দিতে গিয়ে পদে পদে নানা ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বেশি সমস্যায় পড়েছেন শিক্ষার্থীদের মায়েরা। অধিকাংশ মা-ই কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। এ সব অভিভাবক জানান, অনলাইনে ফরম পূরণ করতে গিয়ে খরচ বেড়েছে। অধিকাংশ অভিভাবক আবেদন ফরম সংগ্রহ ও পূরণ করতে গিয়ে সাইবার ক্যাফে বা স্কুলের সামনের কম্পিউটার দোকানগুলোর শরণাপন্ন হচ্ছেন। এর সুযোগ নিচ্ছে সাইবার ক্যাফে ও কম্পিউটার দোকানগুলো। তারা যার কাছ থেকে যা আদায় করা সম্ভব তাই করছে। কোনো ধরনের ব্যবসায়িক নৈতিক আচরণের বালাই নেই তাদের।
জেবুন্নেছা নামে এক অভিভাবক বলেন, ঘরে বসে অনলাইনে ফরম পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। আমার বাসায় কম্পিউটার রয়েছে, কিন্তু স্ক্যানার নেই। ফলে আমাকে বাইরে সাইবার ক্যাফে আসতে হলো। তিনি জানান, অনেকের কম্পিউটার থাকলেও ইন্টারনেট সংযোগ ও মডেম নেই। আবার কারো কারো ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেও স্ক্যানার নেই। এ জন্য বেশির ভাগ অভিভাবক সাইবার ক্যাফে কিংবা কম্পিউটার দোকানগুলোতে ফরম পূরণ করতে ভিড় করছেন। তারা জানান, এখানে এসে ফরম পূরণ ও চার্জ বাবদ অভিভাবকদের অতিরিক্ত ১০০/১৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। বিকাশের মাধ্যমে ফরমের মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। বেশ কিছু অভিভাবক অভিযোগ করেন, বিকাশ এজেন্টরা কোথাও কোথাও ৫০ টাকা অতিরিক্ত চার্জ নিচ্ছে। টেলিটকের মাধ্যমে অর্থ নিলে অভিভাবকদের বাড়তি টাকা দিতে হতো না।
অথচ অনলাইন পদ্ধতিতে যাওয়ার ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) প্রধান যুক্তি ছিল, আবেদন ফরম পূরণ, জমা, আবেদন ফরমের ফি অনলাইনে করা হয়েছে ভর্তি বাণিজ্য রোধ, অভিভাবকদের হয়রানি ও অতিরিক্ত অর্থের অপচয় রোধ করতে। এ ছাড়া সব কিছুই ডিজিটাল হচ্ছে তাই স্কুলে ভর্তিও অনলাইনে বা ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মাউশির উপপরিচালক (মাধ্যমিক) এ কে এম মোস্তফা কামাল বলেন, গতকাল পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। অনলাইনে যেতে হয়েছে ভর্তি বাণিজ্য ও আবেদন ফরম বিতরণ নিয়ে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। প্রথমবারের কারণে হয়তো কিছু সমস্যা হয়েছে। এটিকে বড় করে দেখার কিছু নেই।
টেলিটক বাদ দিয়ে বিকাশে টাকা জমা নেয়া নিয়ে প্রশ্ন অভিভাবকদের:
সব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুল) অনলাইন কার্যক্রমের লেনদেন এতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের মাধ্যমেই সম্পন্ন হতো। এখানে টাকা জমা দেয়া হলে অতিরিক্ত কোনো চার্জ দিতে হয় না। কিন্তু স্কুলের ভর্তিতে অনলাইন চালুর সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’-র মাধ্যমে ফরমের মূল্য পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হলে অভিভাবকদের অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে বিকাশ এজেন্টদের। মাত্র ১৫০ টাকা জমা দিতে গিয়ে অতিরিক্ত ৫০ টাকা চার্জ আদায় করায় প্রশ্ন উঠেছে। অভিভাবকেরা অভিযোগ করেন জানান, এক শ্রেণীর অসৎ এজেন্ট এ কাজটি করছেন মহিলাদের কাছ থেকে।
এ নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল কোম্পানি টেলিটকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিটকের ঊর্ধ্বতন সাবেক এক কর্মকর্তা (যিনি বতর্মানে একটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিতে কর্মরত) বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা হয়তো মাউশির কর্মকর্তা বা ভর্তি কমিটির সদস্যদের চাহিদা পূরণ করতে পারেননি বলেই টেলিটককে বাদ দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে ফরমের মূল্য সংগ্রহ করছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আগামীতে টেলিটকের হাতে কিছুই থাকবে না। সব বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি অনলাইন কার্যক্রমের লেনদেন করার সুযোগ নিয়ে নেবে।
এ ব্যাপারে মাউশির উপপরিচালক (মাধ্যমিক) এ কে এম মোস্তফা কামাল বলেন, ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকেই এটি করা হয়েছে। তবে ১৫০ টাকা জমা দিতে অতিরিক্ত ৫-১০ টাকা নিতে পারে কিন্তু ৫০টাকা নেয়া অন্যায়। কারণ বিকাশ করতে আবেদনকারীকে কোনো টাকাই দিতে হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। রাজধানীর ৩২টি সরকারি স্কুলে অনলাইনে ভর্তিকার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিট থেকে অনলাইনে ভর্তিকার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।