অগ্নিপরীক্ষায় মির্জা আব্বাস!
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৬:০৭,অপরাহ্ন ০৩ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে বিএনপি লাগাতার কর্মসূচি দিলেও আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ঢাকা মহানগর বিএনপির কার্যকারিতা নিয়ে দলের ভেতরেই প্রশ্ন ওঠে।
এরই প্রেক্ষিতে এবং সময়ের প্রয়োজনে নতুন প্রত্যাশা নিয়ে দলের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের হাতে। তবে বছর ঘুরে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এবার সেই প্রত্যাশা পূরণে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে অগ্নিপরীক্ষা দিচ্ছেন পোড় খাওয়া এই রাজনীতিবিদ।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর বিপরীতে ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস পালন করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে বিএনপিতে। ওইদিন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। অপর দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনের সড়ক অথবা মতিঝিলের শাপলা চত্বর চায় বিএনপি। যে কোনো মূল্যেই জনসভা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি। আর এই কর্মসূচি সফল করার গুরু দায়িত্ব পড়েছে মহানগর নেতাদের ওপর, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মির্জা আব্বাস।
কর্মসূচি সফল করার প্রত্যয় জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘৫ জানুয়ারিতে ঢাকায় গণতন্ত্র হত্যা দিবসের সমাবেশ করব। অনুমতি দেবে কি দেবে না, তা সরকারের বিষয়। আমাদের যা করণীয়, তা আমরা করব।’ অনুমতি না পেলেও জনসভা করার কথা জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সরকারকে বলব, আর বিলম্ব নয়। বিএনপি প্রধানের প্রস্তাব মেনে নিয়ে দ্রুত আলোচনায় বসুন। গত বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে এবারের দিনটি হবে ব্যতিক্রম। সেদিন থেকেই শুরু হবে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার নতুন অভিযাত্রা।’
তবে বিএনপি নেতাদের এই হুঁমকির বিপরীতে বিএনপিকে রাজপথে না নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। বিএনপিকে মাঠে নামতে দেওয়া হবে না জানিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘১৪ দলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আগামী ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করব। ওই দিনটি আমাদের। সেই দিন কাউকে মাঠে নামতে দেব না। মাঠ থাকবে আমাদের দখলে।’
বিএনপিকে উদ্দেশ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দয়া করে ৫ জানুয়ারি মাঠে নামার চেষ্টা করবেন না। সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করবেন না। কোনো ধরনের সংঘাত হলে তার দায়ভার বিএনপির ওপর বর্তাবে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আমাদের নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবে। কোনো নাশকতা করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
৫ জানুয়ারি বিএনপিকে প্রতিহত করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। ক্ষমতাসীনদের মাঠে থাকার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থানে শনিবার শোডাউন করেছে ছাত্রলীগ।
এ অবস্থায় ৫ জানুয়ারি কর্মসূচি সফল করতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। তবে বকশিবাজার সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরের শীর্ষ নেতাদের বড় একটি অংশ এখন আত্মগোপনে। তাদের বাসায় পুলিশী তল্লাশিতে কিছুটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বিএনপি। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহানগর বিএনপির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং মহনগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের বাসায়। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এই শাখাটির নেতারা রয়েছেন আত্মগোপনে। এই পরিস্থিতিতে ওইদিন বিএনপির রাজপথ দখলে মহানগর বিএনপি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
যদিও মহানগর বিএনপির একজন নেতা যিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের খুবই কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত, তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মহানগরের নেতারা কে কোথায়, কিভাবে আছেন সেটি বড় কথা নয়। তবে নেতাকর্মীরা এবার মাঠে থাকবেন সেটিই মূল বিষয়। তাদের সেইভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
বিএনপির কমূর্সচি শান্তিপূর্ন হবে জানিয়ে এই নেতা বলেন, ‘আমরা ,শান্তিপূর্ন কর্মসূচি করতে চাই। তবে সরকার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করলে এর দায় নেবেনা বিএনপি।’
মহানগর বিএনপির একটি সূত্র বলছে, ৫ জানুয়ারিতে মাঠে থাকতে প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডকে এরই মধ্যে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এই কর্মসূচিতে মাঠে থাকাই মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে স্থান পাওয়ার মানদ- হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
তবে মির্জা আব্বাসের নির্দেশনা পর ৫ জানুয়ারিতে নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে কি না তা সময়ই বলে দেবে। তিনি নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারবেন নাকি খোকার মতো ‘ব্যর্থতার’ খাতায় নাম লেখাবেন তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত-এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।