অক্টোবরেই বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপালে যান চলাচল শুরু
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:০৬:৪৮,অপরাহ্ন ১৫ জুন ২০১৫
নিউজ ডেস্ক ::
দক্ষিণ এশিয়ার চার প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে সড়ক পথে আগামী অক্টোবরেই পরীক্ষামূলকভাবে যান চলাচল শুরু হবে। রবিবার ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে বিবিআইএনের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের এক বৈঠকে এ বিষয়ক চুক্তি এবং সময় চূড়ান্ত হয়। আজ সোমবার একই জায়গায় চার দেশের পরিবহন মন্ত্রীরা এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে চুক্তিটিতে সই করবেন। স্থানীয় সময় বেলা ১২টায় থিম্পুর লি মেরিডাইন হোটেলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে’র উপস্থিতিতে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চুক্তি অনুযায়ী, সীমান্ত দিয়ে ব্যক্তিগত, যাত্রী ও মালবাহী যানবাহন কোনও হয়রানি ছাড়াই চলাচল করতে পারবে। এছাড়া চুক্তিটি চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশিরা স্থলপথেই ভারত, নেপাল ও ভুটানে তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি বা যাত্রীবাহী বাসে ভ্রমণ করতে পারবে। একইভাবে ব্যবসায়ীরাও কোনও প্রকার ট্রান্স-শিপমেন্টের ঝামেলা ছাড়াই তাদের মালামাল বহন করতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব চন্দন কুমার দে থিম্পুর উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের আগে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চুক্তিটিতে সই হওয়ার পরে এ বিষয়ক একটি কমিটি গঠন করা হবে যারা নির্দিষ্ট করবেন যে কীভাবে এ সংযোগ সড়কগুলো ব্যবহার করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়ে একটি প্রোটকল সই হবে। এরপরই যাত্রীরা নতুন এ সুবিধাটি ভোগ করতে পারবেন।’
চুক্তিটি সই হলে বাংলাদেশের ২০টি স্থলবন্দর এবং দুইটি সমুদ্রবন্দর এ চুক্তির আওতায় আসবে। বিবিআইএনে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো বিভিন্ন প্রয়োজনে সেগুলো ব্যবহার করতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাত্রী চলাচলের একটি দ্বিপাক্ষীয় চুক্তি বিরাজমান রয়েছে। কিন্তু এ চুক্তিটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশি ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ি ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানেও যেতে পারবে।
গত বছর নেপালের কাঠমাণ্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সময় ভারত এ চুক্তিটির প্রস্তাব দিয়েছিলো। পাকিস্তান তখন চুক্তিটির বিরোধিতা করেছিলো। এসময় অন্য চারটি দেশ পাকিস্তানকে বাদ দিয়েই এ সড়ক চুক্তিটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘চুক্তিটির মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার বিবিআইএনের চারটি দেশের মানুষ নিজেদের মধ্যে সহজে যাতায়াত করতে পারবে। এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুবই ইতিবাচক একটি দিক হবে যদি আমরা সঠিকভাবে আমাদের শুল্ক নির্ধারণ এবং আদায় করতে পারি। কিন্তু যদি তাতে ব্যর্থ হই তবে এটা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়ে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি ভারতের কয়েকটি রাজ্য এবং নেপাল আমদের সমুদ্র বন্দরগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে পারবে। সারা বিশ্ব যেখানে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে সেখানে আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো?’
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক শামসুল হক নেপাল, ভুটান ও ভারত থেকে আসা যানবাহনগুলোর জন্য যৌক্তিক করারোপের বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভারী যানবাহনগুলো আমাদের রাস্তার ক্ষতি করবে এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর সেগুলোর মেরামত করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষীয় বাণিজ্যে কর নির্ধারণের জটিলতার কারণে অসমতা রয়ে গেছে। তাই প্রথমেই এ সমস্যাটির সমাধান করতে হবে। যদি সেটি হয় তবে আমাদের সমুদ্রবন্দরগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা ব্যাপক লাভবান হব।’