হালুয়ারঘাট-মঙ্গলকাটা-খাগেরগাঁও সড়কের বেহাল অবস্থা
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৩৪:১৫,অপরাহ্ন ১৮ জুলাই ২০১৪
আকরাম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ
‘হালুয়ারঘাট-মঙ্গলকাটা এই সড়ক নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে, আবার কাজও হয়েছে। কিন্তু কাজ স্থায়ী হয়নি। প্রায় ৮ বছর আগে এই সড়কের সর্বশেষ সংস্কার কাজ হয়েছে। গাড়ি ও মানুষ চলাচল বন্ধ করে কাজ করা হয়েছিল। মাসখানেক যাবত এই সড়কে কাজ করেন ঠিকাদার। কিন্তু সংস্কারের সপ্তাহখানেক পর বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে-মুছে নিয়ে যায় সড়কের সব সংস্কার কাজ। গাড়ি ও মানুষ চলাচল বন্ধ করে দুই নম্বরি কাজ করা হয়েছিল এই সড়কে। এই সময় আমরা স্থানীয়রা মুখ খুলতে পারিনি এই অনিয়মের বিরুদ্ধে। আমাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে। এখন সড়কের বেহাল অবস্থার জন্য দায়ী স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।’
শনিবার সকালে এমন মন্তব্য করেন মঙ্গলকাটা থেকে হালুয়ারঘাট আসার পথে গাড়ির যাত্রী শহীদুল ইসলাম। তাঁর এমন মন্তব্যে মাথা নেড়ে সায় দেন গাড়িতে সহযাত্রী অন্য কয়েকজন। এই সময় এই প্রতিবেদকের সাথে গাড়িতে শহীদুল ইসলামের কথা হচ্ছিল সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের হালুয়ারঘাট-মঙ্গলকাটা সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে। এলাকার মানুষের শহরের সাথে প্রধান যোগাযোগ সড়ক এটি। এই সড়কে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন শহরে। সদর উপজেলার সুরমা, জাহাঙ্গীরনগর, রঙ্গারচর ইউনিয়নের, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সুলোকাবাদ ইউনিয়নের, দোয়ারাবাজার উপজেলার চকবাজার, বাংলাবাজার ইত্যাদি এলাকার মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন।
হালুয়ারঘাট-মঙ্গলকাটা সড়কের ভৈষারপাড় এলাকা পর্যন্ত হেঁটে চলাচল করা বা গাড়ি দিয়ে চলাচল করা এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে মুছে যাওয়া সংস্কার কাজ এখন ছোট-বড় অসংখ্য গর্তে পরিণত হয়েছে। দিবারাত্রি গাড়ি চলাচলে ধুলির সড়কে পরিণত হয়েছে পুরো এলাকা। সড়কের পথচারীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের চলাচল এখন ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন কোনো না কোনো দূর্ঘটনা ঘটে চলেছে বলে জানান হালুয়ারঘাট বাজারের ব্যবসায়ী জহির উদ্দিন।
মতিউর রহমান কলেজের শিক্ষার্থী আবুল হোসেন বলেন, ‘এই সড়কে চলতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। সাইকেল নিয়ে চলতে পারি না, হেঁটে যাই কলেজে। তবুও পায়ে ব্যথা পাই। আমাদের কষ্ট লাঘবে সড়ক সংস্কার জরুরি প্রয়োজন।’
বেরিগাঁও এলাকার প্রবীণ শিক্ষক আবদুস ছুবহান বলেন, ‘এই সড়কের এমন দুর অবস্থা জীবনেও দেখিনি। সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হলেই আশ্বস্থ হই, এই বুঝি লেগে থাকা ভুগান্তি দুর হবে। সংস্কারের কয়দিন পর আবারও হতাশায় পড়ি আমরা। এই সড়কের বরাদ্দের টাকায় বেশি কাজ না হয়ে দুর্নীতি হয় বেশি। সড়ক সংস্কারের আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’
এদিকে, মঙ্গলকাটা বাজারের উত্তরে খাগেরগাঁও সড়কের অবস্থাও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষজন ও গাড়ি চলাচলে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। অর্ধ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত হয়েছে এবং ঢালাই ভেংগে পাথর বেরিয়ে গেছে। সড়কের কয়েক স্থানে রড বেরিয়ে গেছে। যাহা গাড়ি ও মানুষজন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই সড়ক হাসাউড়া, নৈগাং, রংপুর, ইসলামপুর, চিনাউড়াসহ প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন চলাচল করে থাকেন। এই সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা জহির আহমদ, আব্দুল মান্নানসহ আরও অনেকে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল আহমেদ বলেন, ‘হালুয়ারঘাট-মঙ্গলকাটা সড়ক সংস্কারের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, এখনও কিছু হয়নি। সড়কটি বিটুমিনাস করার পরিকল্পনা আছে। প্রস্তাব পাশ হয়ে আসলে আগামী বছর কাজ করার সম্ভাবনা আছে। তবে এই সড়কের আওতায় শহর এলাকায় হালুয়ারঘাট পর্যন্ত সড়ক সংস্কারের টেন্ডার হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হবে।’ মঙ্গলকাটা বাজারের উত্তরে খাগেরগাঁওয়ের সড়ক সংস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘খাগেরগাঁও সড়ক সংস্কারের টেন্ডার হবে। অতি শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’