হাজী দানেশে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ: নিহত ২
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১২:৩২,অপরাহ্ন ১৭ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পাতিবার রাতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে ২ জন ছাত্র নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শিক্ষকসহ আরও ১০ জন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ গভীর রাতে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরী মিটিং করেছে। মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ ছাত্রকে বহিস্কারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’র পদত্যাগের দাবী জানিয়ে আসছিলো।
আন্দোলন, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল-মিটিং, সংবাদ সম্মেলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী পালন করায় এক প্রকার অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। মুখোমুখি অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী, শিক্ষক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকের এক সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি’র ছাত্র অরুণ কান্তি রায় সিটন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের লেভেল-৪ সেমিষ্টার-১ এর ছাত্র এসএম জাহিদ হাসান ও টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেভেল-২ সেমিষ্টার-১ এর ছাত্র অনিন্দ্য দত্ত অন্তুকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়। এতে আন্দোলন আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এ নিয়ে ছাত্রলীগের দু’টি গ্রুপের মধ্যে ১৮ জানুয়ারী ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। আহত হয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হয় ভিসি’র বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্রলীগের গ্রুপটি। আরও সংঘর্ষের আশংকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ৩০ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনের বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ছুটি আরও বাড়িয়ে দেয়া হয়। এতে প্রায় এক মাস ১২দিন বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটোনারী অনুষদের প্রথম বর্ষ শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান চলাকালীন সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত ছাত্রলীগের গ্রুপটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পর শুরু হয় এ সংঘর্ষ। এ সংঘর্ষ চলে ১০টা পর্যন্ত। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ পুলিশের গুলিবর্ষণ টিয়ারশেলে পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ শুরু’র আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয় কে বা কারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ৩ মিনিট বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় থাকে।
সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে ঘটনাস্থলে বিবিএ’র ছাত্র জাকারিয়া জাকি এবং দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর মাষ্টার্স এর ছাত্র মিল্টন নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় শিক্ষক প্রফেসর ফজলুল হক, শিক্ষার্থী বজলুর রশিদ, জাহিদসহ কমপক্ষে ১০ জন। এর মধ্যে ৮ জনকে দিনাজপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহতের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন দিনাজপুর পুলিশ সুপার রুহুল আমিন। পরিস্থিতি এখনও থমথমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরী মিটিং করেছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখার আহমেদ রিয়েল এবং সাধারণ সম্পাদক অরুন কুমার রায় সিটনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ নুর হোসেন হল দখল করে নেয়।
অপরদিকে, রিয়েল ও সিটনের দখল করা নূর হোসেন হলের দখন পুনরায় ফিরে পেতে অপর গ্রুপ হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জেমি, শেখ রাসেল হলের সভাপতি পলাশ ও ছাত্রলীগ নেতা নয়নের নেতৃত্বে পাল্টা হামলা চালালে পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি ইফতেখার আহমেদ রিয়েল অভিযোগ করে বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পুলিশ ও বহিষ্কৃত নেতা জেমি, পলাশ ও নয়নের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও বহিষ্কৃত নেতাদের গুলিতে মিল্টন ও জাকারিয়া নামে দুইজন নিহত এবং জাহিদ, সিফাতসহ পাঁচ জন আহত হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক জেমি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় অডিটেরিয়ামে সেমিনার চলাকালীন রিয়েল ও সিটনের নেতৃত্বে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভিসিসহ সবার ওপর হামলা চালায়। আমরা আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিই। এ সময় পুলিশ তাদের প্রতিহত করতে আসলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। হাবিপ্রবি প্রক্টর এটিএম শফিকুল ইসলাম জানান, সংঘর্ষে আহত ৮ জনকে আমরা উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি প্রেরণ করেছি। তবে এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম খালেকুজ্জামান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ঘটনায় একজন নিহত এবং আহত হওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন। নিহত বিবিএ’র ছাত্র জাকারিয়া জাকি দিনাজপুর শহরের গুড়গোলা এলাকায় এবং মাষ্টার্স এর ছাত্র মিল্টন এর বাড়ি রংপুর জেলায় বলে জানা গেছে। তারা উভয়ে ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলো।