সাফল্য: প্রতিস্থাপিত জরায়ুতে শিশুর জন্ম
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:১৫:৩৯,অপরাহ্ন ০৪ অক্টোবর ২০১৪
চিকিৎসাবিজ্ঞানে এল আরও একটি সাফল্য । প্রতিস্থাপিত জরায়ুর মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর মাসে সন্তান জন্ম দিয়েছেন সুইডিশ এক নারী। প্রচলিত চিকিৎসায় জরায়ু প্রতিস্থাপনের সাহায্যে সন্তান জন্মদানের ঘটনা এটাই প্রথম। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বন্ধ্যা নারীদের মা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূরণের ক্ষেত্রে এই ঘটনা বড় ধরনের অগ্রগতি।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসাবিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেট গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। পত্রিকাটি বলেছে, ওই নারীর জরায়ুতে বেড়ে ওঠা নবজাতকের জন্ম হয়েছে অপরিণত অবস্থায়। শিশুটির ওজন এক দশমিক আট কেজি (তিন দশমিক নয় পাউন্ড)। নবজাতকের বাবা তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়ায় ছেলেকে ‘অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেছেন।
জরায়ু ছাড়াই জন্ম হয়েছিল ৩৬ বছর বয়সী ওই নারীর। এরপর গত বছর ৬০ বছর বয়সী পারিবারিক বন্ধু তাঁকে জরায়ু দান করেন। ওই জরায়ুদাতা নারীর আরও সাত বছর আগে ঋতু বন্ধ হয়ে গেছে।
মূলত ক্যানসারের চিকিৎসা ও জন্মগত ত্রুটির কারণেই একজন নারীর জরায়ু অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। ওই নারী সন্তান নিতে চাইলে অন্যের জরায়ুতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপনই হচ্ছে তাঁর একমাত্র উপায়।
নবজাতকের মা-বাবার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে এটা জানা গেছে যে ওই নারীর ডিম্বাশয় এখনো সক্রিয় রয়েছে। এই দম্পতি ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ পদ্ধতির (গবেষণাগারে স্ত্রীর ডিম্বাণু ও স্বামীর শুক্রাণু নিষিক্ত করে ভ্রূণ সৃষ্টি) মাধ্যমে ১১টি ভ্রূণ উৎপাদন করেছিলেন। পরে তা হিমাঙ্কে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এর পর গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিকিৎসক ওই নারীর প্রতিস্থাপিত জরায়ুতে একটি ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করেন।
প্রতিস্থাপিত জরায়ুতে নিষ্ক্রিয়তা ঠেকাতে ওই নারীকে ওষুধ গ্রহণ করতে হয়েছে। জরায়ু প্রতিস্থাপনের এক বছর পর চিকিৎসকেরা তাঁর ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করেন। এরপর গর্ভধারণের ৩২ সপ্তাহের মাথায় তিনি সন্তান জন্ম দিলেন। তাঁর খিচুনি ও নবজাতকের হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক ছিল। এ জন্য চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর সন্তান-প্রসব করান। বর্তমানে নবজাতক ও মা দুজনেই সুস্থ আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নবজাতকের বাবা বলেছেন, ‘গত কয়েক বছর আমরা কঠিন সময় পার করেছি। কিন্তু এখন আমরা এক অসাধারণ সন্তানের অধিকারী।’ তিনি বলেন, ‘অন্য আর দশটি শিশুর সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই নবজাতকের। কিন্তু তাঁর ছেলের চমৎকার একটি গল্প রয়েছে।’
এর আগেও দুবার জরায়ু প্রতিস্থাপন করে সন্তান জন্মদানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে একবার প্রতিস্থাপিত জরায়ু সংক্রমিত হওয়ায় প্রতিস্থাপনের তিন মাসের মধ্যে তা অপসারণ করতে হয়েছে। আরেকবার ঘটেছে গর্ভপাত।
জরায়ু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সফলভাবে সন্তান জন্মদানে সক্ষম চিকিৎসক দলের প্রধান অধ্যাপক ম্যাটস ব্র্যানস্ট্রম বলেছেন, ‘এটা আমার ও আমার পুরো দলের জন্য অবিশ্বাস্য আনন্দের খবর। আমরা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে আমরা এমন মুহূর্তে উপনীত হব।’ তিনি বলেন, ‘১০ বছরেরও বেশি সময় প্রাণীর ওপর গবেষণা ও অস্ত্রোপচারের প্রশিক্ষণের ফল হচ্ছে আজকের এই সফলতা। বিশ্বের নানা প্রান্তের যেসব অল্প বয়সী নারী জরায়ুজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাঁদের জন্য চিকিৎসা-সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে এই সফলতা।’
চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ লিজা জোহানেসন বলেন, ‘যেসব নর-নারী ভাবছেন তাঁরা কখনোই সন্তান নিতে পারবেন না তাঁদের আশার আলো দেখিয়েছে এই সফলতা।’- বিবিসি