শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে সিলেট সরকারি কলেজ
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২২:৩৫,অপরাহ্ন ২৯ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে সিলেট সরকারি কলেজ। এতে ব্যাহত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক আছেন একজন। আর ৩৫ বছর ধরে নেই উপাধ্যক্ষ। অধ্যক্ষও অবসরে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে কার্যক্রম। অধ্যাপক-সহযোগী অধ্যাপকেরও কোনো পদ নেই কলেজটিতে।
১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজ ১৯২১ সালে সিলেট নগরীর পূর্ব দিকে টিলাগড় এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬৪ সালে ওই কলেজের পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয় মুরারীচাঁদ (এমসি) ইন্টারমিডিয়েট কলেজ নামে আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৮৮ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সিলেট সরকারি কলেজ।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ কলেজে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) শ্রেণিতে পাঠদান চলছে। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে পাঁচটি বিষয়ে চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়েছে। বর্তমানে কলেজে মোট ৬ হাজার ৫৫০ শিক্ষার্থী। বিপরীতে শিক্ষক মাত্র ৩০ জন। এছাড়া সংযুক্ত শিক্ষক আছেন আরো তিনজন। ফলে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে আছেন মাত্র একজন শিক্ষক।
জানা গেছে, অনার্স কোর্স চালু হলেও সেজন্য শিক্ষকের আলাদা পদ তৈরি করা হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষক দিয়েই চলছে অনার্সের ক্লাস। দুই বছর আগে ২৫টি শিক্ষক পদ তৈরির জন্য কলেজের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলেও তা এখনো ঝুলে আছে।
সিলেট সরকারি কলেজে শ্রেণিকক্ষ সংকটও তীব্র। এ দুই সংকটের কারণে ধুঁকছে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স কোর্সের শিক্ষার্থীদের অনেক সময় একসঙ্গে ক্লাস করতে হয়।এ কলেজের অধ্যক্ষ গত বছরের অক্টোবরে অবসরকালীন ছুটিতে গেছেন। এর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়েই চলছে কার্যক্রম। আর ১৯৮৪ সালের পর থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে কলেজটিতে উপাধ্যক্ষ নেই।
অবসরকালীন ছুটিতে থাকা সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আতাউর রহমান বলেন, ‘কলেজের শিক্ষক সংকট নিরসন ও নতুন শিক্ষক পদ তৈরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুফল পাওয়া যায়নি। তবে আশা করছি, এ সংকট বেশিদিন থাকবে না।’
কলেজ সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর সিলেট সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি হয় ৯৫০ শিক্ষার্থী। স্নাতক (পাস) কোর্সে ভর্তি হন ১ হাজার ৫০ জন ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন ২৫০ শিক্ষার্থী। কলেজে শিক্ষক পদ আছে সব মিলিয়ে ৩৫টি। তবে কর্মরত আছেন ৩০ জন। এর মধ্যে সহকারী অধ্যাপক ১৫ ও প্রভাষক ১৫ জন। অধ্যক্ষ ছাড়া অধ্যাপক-সহযোগী অধ্যাপকের কোনো পদ নেই এখানে। কলেজটিতে সংযুক্ত হিসেবে আছেন তিনজন সহযোগী অধ্যাপক।
আশির দশকে করা এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, যেসব কলেজে স্নাতক শ্রেণী আছে, সেসব কলেজে প্রতি বিভাগে সাতজন করে শিক্ষক থাকার কথা। আইন অনুযায়ী, কোনো বিষয়ে ডিগ্রি (পাস), অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু থাকলে শিক্ষক থাকবেন ১২ জন। আর শিক্ষানীতিতে আছে, কলেজ পর্যায়ে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত হবে ৩০:১।
অথচ সিলেট সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে। বাংলা বিভাগে দুজন ও অর্থনীতি বিভাগে আছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক।শিক্ষক সংকটের মধ্যেও কলেজটিতে নতুন করে আরো চারটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর প্রক্রিয়া চলছে। ইংরেজি, ভূগোল, দর্শন এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সিলেট সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাছিমা হক খান এ প্রসঙ্গে বলেন, কলেজের উন্নয়নে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকটকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২৫টি শিক্ষক পদ সৃষ্টির আবেদন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।