মুক্তিপণ না পেয়েই স্কুল ছাত্রকে হত্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১২:৪৫,অপরাহ্ন ১৫ মার্চ ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
স্কুল থেকে ফেরার পথে অপহরণ হয়েছিল সিলেট নগরীর রায়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ (৯)। অপহরণের পর শিশুটির পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। অবশেষে মুক্তিপণ না পেয়েই নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শিশু সাঈদকে। শনিবার দিনগত রাত সাড়ে ১০টায় নগরীর ঝেরঝেরি পাড়ার সবুজ ৩৭ নম্বর বাসা থেকে শিশু সাঈদের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে হত্যার আলামত সংগ্রহের পর রাত দেড়টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রেরণ করে। স্কুল ছাত্রকে অপহরণের পর হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এসএমপির বিমানবন্দর থানার এক পুলিশ কনস্টেবল, জেলা ওলামা লীগের এক নেতা ও র্যাবের এক সোর্সকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত ওই কনস্টেবলের ভাড়া বাসা থেকেই উদ্ধার করা হয় শিশু সাঈদের মরদেহ।
আটককৃত পুলিশ কনস্টেবল এবাদুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই শিশুর মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এবাদুলের তথ্যের ভিত্তিতেই আটক করা হয় জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব ও গেদা নামের র্যাবের এক সোর্সকে। পুলিশের ধারণা, খুন হওয়া শিশুর বাবার সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল এবাদুলের পূর্ব বিরোধ থেকেও এ ঘটনা ঘটতে পারে।
জানা যায়, বুধবার স্কুল থেকে ফেরার পথে অপহরণ করা হয় দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নং বাসার মতিন মিয়ার ছেলে আবু সাঈদকে। সাঈদ নগরীর রায়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র। তাদের গ্রামের বাড়ি জগন্নাথপুরে। অপহরণের পর সাঈদের বাবা ও মামার কাছে ফোনে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় বুধবার রাতে কতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন অপহৃত সাঈদের মামা জয়নাল আবেদীন।
জয়নাল আবেদীন জানান, অপহরণের পর তাকে ও সাঈদের বাবাকে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করা হয়। পাঁচ লাখ টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তারা দুই লাখ টাকা দাবি করে। প্রথমে টাকা নিয়ে শাহজালাল (র.) দরগায় যেতে বলে অপহরণকারীরা। দরগায় যাওয়ার পর অপহরণকারীরা আবার ফোন করে সেখান থেকে এয়ারপোর্ট সড়কের বাইশটিলা এলাকায় যেতে বলে। বাইশটিলায় যাওয়ার পর পুলিশ ও র্যাবকে বিষয়টি কেনো জানানো হয়েছে অপহরণকারীরা ফোনেই তা জানতে চায়। এ সময় তারা সাঈদকে খুন করার হুমকি দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়।
সাঈদের বড় মামা আশরাফুজ্জামান আজিম বলেন, শুক্রবারও কনস্টেবল এবাদুলের সঙ্গে আমার দেখা হয়। এসময় সে সাঈদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয় এবং তাকে উদ্ধারে সব ধরনের সহযোগীতা করার আশ্বাস দেয়। কতোয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার ফয়াজ আহমদ ফয়েজ জানান, স্কুল ছাত্র সাঈদ অপহরণের অভিযোগে জিডির তদন্ত বর্তায় তার ওপর। তদন্তকালে যে মোবাইল ফোন থেকে সাঈদের বাবা ও মামার কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে সেই মোবাইল হ্যান্ডসেটটি ট্র্যাকিং করা হয়। ট্র্যাকিং করে দেখা যায়, বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুল এই ফোনটি ব্যবহার করছেন। শনিবার এবাদুলকে কতোয়ালি থানায় ডেকে আনা হয়।
ফয়েজ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে কনস্টেবল এবাদুল শিশু অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। একপর্যায়ে সে বিষয়টি স্বীকার করে এবং শিশু সাঈদকে খুন করা হয়েছে বলে জানায়। এবাদুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঝেরঝেরি পাড়ার সবুজ ৩৭ নম্বর বাসার চিলেকোটা থেকে শিশু সাঈদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এক প্রবাসীর বাসার দোতলায় কনস্টেবল এবাদুল ভাড়া থাকেন বলে এসআই ফয়েজ জানান। পুলিশ লাশ উদ্ধারকালে এবাদুলের স্ত্রী সিনথিয়া নির্ঝর তানিয়াও বাসায় ছিলেন। তিনি নগরীর কুমারপাড়ার স্বপ্নঝাড়া বিউটি পার্লার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।
এবাদুলের দেওয়া তথ্যমতে নগরীর বন্দরবাজার থেকে পুলিশ জেলা ওলামা লীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিব ও কোর্ট পয়েন্ট সংলগ্ন মধুবন মার্কেটের সামনে থেকে পুলিশের সোর্স গেদাকে আটক করে। এ ব্যাপারে কতোয়ালি থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, এবাদুল, রাকিব ও গেদা-এ তিনজন মিলেই শিশুটিকে অপরহরণ করে হত্যা করেছে। বুধবার অপহরণের পর বৃহস্পতিবার সকালের দিকে শিশু সাঈদকে হত্যা করা হয়। শিশুটির বাবার সঙ্গে আটক কনেস্টেবলের পূর্ব পরিচয় ছিল। সাঈদের বাবার সঙ্গে পরিচয় ও অপহরণকারী কনস্টেবলকে চিনে ফেলার কারণে শিশুটিকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করছেন ওসি।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সিলেটের পরিদর্শক শামীমুর রহমান পীর জানান-বাসার চিলেকোটা থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া যায়। একটি পাটের ও ৬টি প্লাস্টিকের বস্তায় মোড়ানো ছিল মরদেহ। শিশুটির গলায় প্রায় দুই হাত লম্বা একটি রশি লাগানো ও গলায় রশির দাগ মিলেছে। শিশুটির গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) রহমত উল্লাহ বলেন, স্কুল ছাত্র হত্যার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জড়িত থাকার দায়ে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলে জানান তিনি। সিলেট মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার এসএম রুকন উদ্দিন বলেন- পুলিশ সদস্য জড়িত হওয়ার পরও তাকে আটক করে পুলিশ কর্তব্য নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কমিশনারের উপস্থিতিতে আটকদের কোতোয়ালি মডেল থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গত বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় স্কুল থেকে ফেরার পথে আবু সাঈদ অপহরণের শিকার হয়। সে নগরীর রায়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ও ওই এলাকার দর্জিবন্দ বসুন্ধরা ৭৪ নং বাসার মতিন মিয়ার ছেলে।