মানবতাবিরোধী অপরাধ : হবিগঞ্জের রাজ্জাকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০১:২৯,অপরাহ্ন ১৭ মে ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া ইউনিয়নের কুমুরশামা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বড় ভাই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও তার ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া।
রোববার এই তিন আসামির বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও তাপস কান্তি বল। পরে ২৫ মে তা আমলে নেয়ার বিষয়ে শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য করেছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
গত ৩০ এপ্রিল একই মামলার আসামি বড় মিয়া ও আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। সে সময় এ মামলার তদন্তকালে আব্দুর রাজ্জাকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয়।
বড় মিয়া, আঙ্গুর মিয়া ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নূর হোসেন ২০১৪ সালের ১১ ফেব্র“য়ারি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ২৮ এপ্রিল শেষ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমুরশামা গ্রামের বাসিন্দা গ্রেফতারকৃত মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এলাকায় রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলেন। তাদের মধ্যে বড় ভাই ছিলেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ও ছোট ভাই ছিলেন রাজাকার কমান্ডার। তাদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক। আসামিরা এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউর ব্যরিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জানান, তাদের বিরুদ্ধে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে ফেলেন আসামিরা। তারা মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি মরহুম মেজর জেনারেল এম এ রবের বাড়িতে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগিতায় হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যান এবং ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেন।
এছাড়া ওই এলাকার উত্তরপাড়ায় তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে করে আত্মহত্যা করেন। শেষ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তর সালের বাংলা ভাদ্র মাসের কোন এক দিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালান তারা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে যান আনছার আলী।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্তের স্বার্থে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেফতারের আবেদন জানান প্রসিকিউশন। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। ১১ ফেব্র“য়ারি দুপুর ১২টার দিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ি এলাকা থেকে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেফতার করে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। ১২ ফেব্র“য়ারি হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল।
২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের বিচারিক হাকিম রাজীব কুমার বিশ্বাসের আমলী আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানা পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আদালত থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে গত ১১ মার্চ রাজাকার কমান্ডার মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে সেফ হোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত সংস্থা।
বানিয়াচং থানার ওসি নির্মলেন্দু চক্রবর্তী জানান, আব্দুর রাজ্জাক পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।