বনভোজনের চাঁদা দিতে না পারায় ১৫০ শিক্ষার্থীকে স্কুল গেট থেকে ফিরিয়ে দিলেন প্রধান শিক্ষিকা
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৩৯:০৩,অপরাহ্ন ২৫ মার্চ ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: জাকেলা খাতুন ও মুনমুন খাতুন দুই বোন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ভাটোপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাকেলা পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে আর মুনমুন দ্বিতীয় শ্রেণিতে।
তাঁদের বাবা শফিক উদ্দীন মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। গৃহকর্মীর কাজ করে বহুকষ্টে দুই মেয়েকে স্কুলে পাঠান মা নুরজাহান বেগম। স্কুলের বার্ষিক বনভোজনের জন্য মেয়েদের চাঁদা দিতে পারেননি নুরজাহান। তাই আজ বুধবার বনভোজনের দিন জাকেলা-মুনমুনকে স্কুলেও ঢুকতে দেননি তাঁদের স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।
একই ভাবে চাঁদা দিতে পারেননি পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া খাদিজা খাতুনের কৃষক বাবা সাইফুদ্দিন, প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া মেহেদী হাসানের দিনমজুর বাবা সাদেক আলী, চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া মরিয়ম খাতুনের গৃহকর্মী মা মনোয়ারা বেগম ও বাবা মা হারা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া খাতুন এবং তাঁর বোন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুরমি খাতুন।
এদের কাউকেই বনভোজনের দিন স্কুলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সুরমি-সুরাইয়া-মুনমুনদের মতো স্কুলের ১৫০ শিক্ষার্থীকে স্কুল গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তহরিমা আক্তার।
এলাকাবাসী ও স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভাটোপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক বনভোজনের জন্য প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাথা পিঁছু চাঁদা ধরা হয় ১০০ টাকা। কিন্তু অনেকেই এই চাঁদা দিতে পারেনি। তাই বনভোজনের দিন আজ তাঁদের স্কুলের ভেতরও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। চাঁদা দেয়া শিক্ষার্থীদের ভেতরে নিয়ে স্কুলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
এরপরেও দুপুর পর্যন্ত স্কুল গেটের বাইরে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো চাঁদা দিতে না পারা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। পরে প্রধান শিক্ষিকা গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙে দুর্ব্যবহার করে তাঁদেরকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। দুপুরের পর শিক্ষার্থীরা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুল কতৃর্পক্ষের আমন্ত্রণে বনভোজনে এলাকার অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন দু’জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাও। কিন্তু অসচ্ছল শিক্ষার্থীরা চাঁদা দিতে না পারায় তাঁদের স্কুলেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এর প্রতিবাদও করেছেন এলাকাবাসী। তবে অভিযোগ, তাঁদের সঙেও দুর্ব্যবহার করেছেন স্কুলের শিক্ষকেরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা তহরিমা আক্তার বলেন, স্কুলটিতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৯১ জন। এর মধ্যে চাঁদা দেয় ২৪১ জন। বাকিরা চাঁদা না দেয়ায় তাঁদের স্কুলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তিনি দাবি করেন, সবাইকে বনভোজনে অংশ গ্রহণ করতে দিলে যেসব শিক্ষার্থী চাঁদা দিয়েছে তাঁরা মন খারাপ করতো। তাই তাঁদের স্কুলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সানাউল্লাহ বলেন, বনভোজনে কি রকম বাজেট ছিলো, কি রকম খাবার ছিলো এসব ভেবে হয়তো প্রধান শিক্ষিকা চাঁদা না দেয়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশ করতে দেননি। বিষয়টি সম্পূর্ণ স্কুল কতৃর্পক্ষের ব্যাপার। এখানে তাঁর কিছু করার নেই।