‘প্রাথমিক শিক্ষক বদলি নীতিমালা’ সংশোধন হচ্ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৪:১৯,অপরাহ্ন ২৩ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বদলি নীতিমালা, ২০১৫’ ঘোষণার এক মাস না হতেই এটিকে সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। সংশোধনীতে খর্ব করা হচ্ছে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউইও) ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) বদলি-সংক্রান্ত একচ্ছত্র ক্ষমতা।
সংশোধনীর প্রস্তাব অনুসারে ইউইওর একক সিদ্ধান্তে নয়, বরং উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশ নিয়ে বদলি করতে হবে। সুপারিশ কার্যকর করবেন ডিপিইও। গত মার্চে প্রণয়ন করা নীতিমালার পর ‘ডিপিইও’রা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বদলি করেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সংশোধিত নীতিমালায় ইউইও, ডিপিইওদের ক্ষমতা খর্ব করা ছাড়াও আরো কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। জেলা সদর ও জেলা সদরের পৌরসভায় বদলি আবারও বাতিল করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনে বদলি বাতিলের পাশাপাশি পাশের উপজেলা/থানায়ও বদলির সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে। রাজধানীর ক্ষেত্রে পাশের এলাকা সাভার, কেরানীগঞ্জ, ডেমরা প্রভৃতি এলাকায় বদলির সুযোগ থাকবে না। সংযুক্তির সময়সীমা এক বছর বলে আদেশ দেয়া হলেও সংশোধনীতে এ সময়সীমা তুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।
সাধারণভাবে প্রতি শিক্ষাবর্ষের জানুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে শিক্ষক বদলি সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ বছর গত ১২ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বদলি নীতিমালা, ২০১৫’ ঘোষণা করে। এবার প্রথম আন্তসিটি করপোরেশন বদলির অনুমতি দেওয়া হয়। এ নীতিমালার অপব্যবহার করে সারা দেশে ব্যাপক বদলি বাণিজ্য ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। গ্রাম ছেড়ে শহরে ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষক। একেকটি বদলির ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির গত মাসের সভায় সংসদ সদস্যরা শিক্ষক বদলি নীতিমালা ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করেন এবং সারা দেশে এ নীতিমালার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাপক বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ উত্থাপন করেন। তারা নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানান। এই পরিপ্রেক্ষিতে ঘোষিত নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বদলি নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘোষিত নীতিমালা অনুসারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে বদলি করতে পারেন। জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে বদলির ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সুপারিশক্রমে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বদলি করতে পারেন। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তার সুপারিশের স্থলে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশের বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। এতে উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তার বদলিবিষয়ক একচ্ছত্র ক্ষমতা লোপ পাবে।
জানা গেছে, গত মার্চ মাসে নীতিমালা সংশোধনের আগে আড়াই শতাধিক প্রাথমিক শিক্ষককে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে সংযুক্ত বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা নীতিমালায় প্রাপ্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাপক হারে বদলি ও সংযুক্ত বদলির আদেশ দিয়েছেন। এতে অনেক শিক্ষক শাস্তিমূলক বদলির শিকার হয়েছেন। এর ফলে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সন্তোষ কুমার অধিকারী জানান, বদলি নীতিমালা জারির পর গত এক মাসে সারা দেশে কতজন শিক্ষককে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) সংযুক্ত বদলির আদেশ দিয়েছেন, এর তালিকা চাওয়া হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে এসব আদেশ দেওয়া হয়েছে এরও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অন্যায় হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
সৌজন্যে-কালের কণ্ঠ