আদিবাসী গ্রামগুলোতে উৎসবের আমেজ
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৫:৩৩,অপরাহ্ন ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: আজ শুভ বড়দিন। গতকাল বুধবার কোথাও কোথাও চলছিল বাড়িঘরে আলপনা তৈরির কাজ। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার আদিবাসী নারীরাও হয়ে উঠেছিলেন একেক জন শিল্পী। নিখুঁত হাতে দেয়ালে দেয়ালে এঁকে চলেছেন আলপনা, দেয়াল লিখন। কেউ কেউ লিখেছেন প্রভূ যিশুর মুক্তির অমর বাণীÑ ‘ঘৃণা নয়, ভালোবাসা। ভালোবাসো সবাইকে, ভালোবাসো তোমার প্রতিবেশীকে, এমনকি তোমার শত্র“কেও। মানুষকে ক্ষমা করো, তাহলে তুমিও ক্ষমা পাবে। আর পাপীকে নয়, ঘৃণা করো পাপকে।’
একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গোদাগাড়ী উপজেলায় খ্রিস্টান ধর্মাবলাম্বীদের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার ২৭৪ জন। গোদাগাড়ীর মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৪০ ভাগ। সংখ্যায় একটু কম হলেও বড়দিনের উদ্দীপনা কোন অংশেই কম নয় এখানকার খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের মানুষের। গেল কয়েক বছরের তুলনায় বড়দিনকে ঘিরে এবারই বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এখানকার খ্রিস্টান স¤প্রদায়সহ আদিবাসী পরিবারগুলোতে।
গোদাগাড়ীর চৌদুয়ার গীর্জার ফাদার ফ্র্যাঞ্চিজ বলেছেন, বড়দিন যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন, মানবজাতির বিজয়ের দিন, বড় আনন্দের দিন। আজ থেকে দুই হাজার ১৪ বছরেরও আগে ২৫ ডিসেম্বর মহাপ্রভু যিশু পৃথিবীতে আসেন। তার আধ্যাত্মিক শক্তি ও মানসিক দৃঢ়তায় তাকে ঈশ্বরের পুত্র বলে মানেন খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের মানুষ। তাই খ্রিস্টাান স¤প্রদায়ের মানুষ ২৫ ডিসেম্বরকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালন করে থাকেন।
বড়দিনকে ঘিরে কয়েক দিন আগে থেকেই গোদাগাড়ীর খ্রিস্টাান পল্লীসহ আদিবাসীদের পাড়ায় পাড়ায় সাজ সাজ রব। ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার কাজ ইতোমধ্যেই শেষ। শুরু হয়েছে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও নতুন জামাকাপড় বানানোর ধুম। গোদাগাড়ীর ৯টি গীর্জায় বড়দিনের নাটক ও কীর্তনের রিহার্সেলও চলছে বেশ জোরেশোরে।
গতকাল বিকেলে উপজেলার মধুমাঠ নামক এক আদিবাসী পল্লীতে বাড়ির দেয়ালে আলপনা আঁকছিলেন আদিবাসী খ্রিস্টান নারী ভেলেনতিনা। প্রায় চল্লিশ বছর বয়সী এই নারীর সঙ্গে কথা হয় তার বাড়ির সামনেই। তিনি বলছিলেন, বড়দিন আসলেই তাদের ব্যস্ততা বাড়ে। গত কয়েক দিন থেকেই প্রচণ্ড ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তবু কাজ শেষ হয়নি। তাই শেষ মুহূর্তে আলপনা আঁকার কাজটি শেষ করছেন।
তিনি বলেন, বড়দিন উপলক্ষে স্বামী সুসিল হাসতাসহ দুই মেয়ে ও এক ছেলের নতুন জামা-কাপড় তৈরি হয়েছে। বড় দিন সকাল দশটার মধ্যেই তাঁরা গীর্জায় যেতে চান। সেখানে বিশেষ প্রার্থনা (খ্রিস্টযোগ) অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরে শুরু হবে বিশেষ খাবার রান্নার কাজ। এদিন তিনি বাড়িতে মুরগির মাংস, আন্দাসা, ক্ষীর, পায়েস, কমলালেবু, পোলাও-বিরিয়ানীসহ বিভিন্ন ধরণের খাবার রান্নার আয়োজনের কথাও জানান। কথা শেষে মেয়ে স্বর্ণলতা হাসতা নিমন্ত্রণ করলেন সাংবাদিকদেরও।
প্রতিবেশী সুনিল হাসতার স্ত্রী রিতা মুরমু বলছিলেন, বড় দিনের প্রস্তুতি দুই ধরনেরÑ আধ্যাত্মিক ও বাহ্যিক। আধ্যত্মিক প্রস্তুতি হলো- পূর্ব পাপের জন্য ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করে অনুতাপ করা এবং কারও সঙ্গে বিরোধ থাকলে তা বড়দিনের আগে মিটিয়ে ফেলা। আর বাহ্যিক প্রস্তুতি হলোÑ সাজগোজ, পোশাক-পরিচ্ছেদ ইত্যাদি। তার মতে, আধ্যত্মিক প্রস্তুতিটাই বড়দিনের বিশেষ প্রাপ্তি।
এদিকে গুণিগ্রামের কৃষক শান্তনু হেমব্রম বলছিলেন, আগের বছর অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তাই উদ্দীপনা ছিল না বড়দিনে। কোনোমতে সেরেছিলেন বড়দিনের আয়োজন। তবে এবার অনেকটাই ভালোভাবে উৎযাপন করবেন বড়দিনের উৎসব।
তিনি বলেন, ধনী-গরীব, যিশু সবার। তিনি এসেছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য। গোটা সৃষ্টির জন্য। তাই বড়দিন শুধু খ্রিস্টাানদের উৎসব নয়। এ উৎসব সর্বজনীন।