চাচিকে মারধরের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বাবা-মায়ের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে ৯ বছরের শিশু ইব্রাহিমকে।
শিশু ইব্রাহিমের বয়স ২২ বছর দেখিয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন সরাইল থানা পুলিশের এএসআই মো. হেলাল চৌধুরী। এতে এবার তিনি ফেঁসে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিবে জেলা পুলিশ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার টিঘর গ্রামের। একই অভিযোগে অভিযুক্ত আসামি হয়েছেন কারাগারে থাকা শিশু ইব্রাহিমের বাবা আবদুস সাত্তার ও তার ভাই জাবেদকে। আদালত থেকে জামিন মিললেও অভিযোগ থেকে এখনও অব্যাহতি মেলেনি শিশু ইব্রাহিম ও তার পরিবারের সদস্যদের।
মামলার ভয় আর পুলিশ আতঙ্কে রয়েছে শিশু ইব্রাহিম। শিশু ইব্রাহিম জানায়, এই বয়স আমার না। আমার প্রতিটি সময় ভয় লাগে। কখন পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়।
শিশুটির পিতা আবদুস সাত্তার জানান, আমি ও আমার ছেলে জাবেদ ছিলাম কারাগারে তারপর এই মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি আমার শিশু ছেলে ইব্রাহিমকে এবার জড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি পুলিশ কর্মকর্তা হেলাল চৌধুরীর বিচার দাবি করেন।
আবদুস সাত্তারের স্ত্রী ও শিশু ইব্রাহিমের মা নূরজাহান জানান, দারোগার সঙ্গে শাহেনার সখ্য থাকায় এই মিথ্যা অভিযোগে আমার শিশুপুত্র ইব্রাহিমকে আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এএসআই মো. হেলাল চৌধুরীর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে জেলা পুলিশ। তবে গাফেলতি কিংবা পক্ষপাতিত্ব তা খতিয়ে দেখছে পুলিশে শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে তার এই কর্মকাণ্ডে বিব্রত তারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, প্রাথমিক ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্তসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে যে মামলাটি হয়েছে, তা যথাসময়ে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
গত বছরের ১৫ অক্টোবর সরাইল উপজেলার টিঘর গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সাত্তার ও তার পরিবারের সব সদস্য এবং তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন শাহেনা বেগম নামে এক নারী। তিনি আবদুস সাত্তারের ছোট ভাই ছায়েদ মিয়ার স্ত্রী।
অভিযোগে তাদের প্রাণনাশের হুমকিতে বাড়ি ছাড়া রয়েছেন বলে উল্লেখ করেন শাহেনা আক্তার। পরবর্তীকালে অভিযোগটি সরাইল থানা পুলিশ ডায়েরিভুক্ত করলে ওসি শাহাদাত হোসেন তদন্তভার দেন হেলাল চৌধুরীকে। তবে অভিযোগটি যখন ডায়েরিভুক্ত হয় তখন কারাগারে ছিলেন আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে মো. জাবেদ।
শাহেনারই দায়ের করা এক মামলায় তাদের গ্রেফতার করে ৭ অক্টোবর আদালতে পাঠায় পুলিশ। এরপর ২৪ অক্টোবর জামিনে কারামুক্ত হন তারা। তবে শিশু ইব্রাহিম মামলায় আসামি হওয়া নিয়ে বিস্মিত তারা।
এ ঘটনায় সরাইল থানার এএসআই মো. হেলাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ইব্রাহিমের বাবা আবদুস সাত্তার। এ মামলায় আবদুস সাত্তারের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শাহেনা বেগমকেও আসামি করা হয়েছে। বিচারক মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র: যুগান্তর