সড়ক-মহাসড়কের ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:১০:৫১,অপরাহ্ন ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
মহাসড়কে দুর্ঘটনা কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এক বা একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতিনিয়ত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে রাস্তায়। এককথায় বলা যায় সড়ক-মহাসড়কের ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পুরোটাই যেন বলতে পারেন নিয়তি।
গতকাল বুধবার এক দিনেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে; তাদের মধ্যে এক পরিবারের চার সদস্য রয়েছেন। শুধু তাই নয়, চলতি মাসে গতকাল পর্যন্ত ৯১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অবস্থাদৃষ্টে বলা চলে, সড়ক-মহাসড়কে যমরাজত্ব কায়েম হয়েছে।
জানা যায়, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী, গত জানুুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫৩টি মহাসড়কে এক হাজার ১২৬ ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রতি ১০ হাজার গাড়িতে ৮৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বছরে গড়ে ১৭ থেকে ২০ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকের অসতর্কতা ও অদক্ষতা, ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন, মহাসড়কে নজরদারির ঘাটতি ও শাস্তির ভয়ের অভাব সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
টাঙ্গাইলে ট্রাকের চাকায় ১০ জন:
চালকের সহকারী ধোয়ার জন্য একটু দূরে নিতে মহাসড়ক ধরেই চালাচ্ছিলেন ট্রাকটি। তাঁর অদক্ষতা ও অসতর্কতার কারণে চাকার নিচে চাপা পড়ে প্রাণ দিতে হয়েছে এক পরিবারের চারজনসহ ১০ জনকে। গুরুতর আহত হয়েছে তিনজন। তারা সবাই টেম্পোযাত্রী, গন্তব্যে পৌঁছার আগেই দুর্ঘটনায় পড়ে।
গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মধুপুরে ট্রাক ও টেম্পোর মুখোমুখি সংঘর্ষের এ ঘটনাটি ঘটে।
নওগাঁয় শিশুসহ চারজন:
নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের বাগাচারায় দুপুরে বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় ব্যাটারিচালিত রিকশার চার যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। নিহতরা হলো মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার (৬০) ও তাঁর শিশুকন্যা (৮), শরীফপুর গ্রামের সোহেল (২২) ও অজ্ঞাতপরিচয় একজন (৩০)। আহত একজনকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার পর নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।
মানিকগঞ্জে ট্রাকসহ ব্রিজ ভেঙে দুজন:
ঢাকা-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ মহাসড়কের সিংগাইর উপজেলার কিটিংচর এলাকায় ট্রাকসহ বেইলি সেতু ভেঙে পানিতে পড়ে চালকসহ দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার ভোর ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন চালক আবুল হোসেন ও সহকারী মহিদুর রহমান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রাকচাপায় একজন:
জেলার শিবগঞ্জে ট্রাকচাপায় গতকাল সকাল ১০টায় সাইকেল আরোহী সাদেকুল ইসলাম (৬০) নিহত হন। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্ত্তি ইউনিয়নের হরিপুর চাতরা গ্রামের মোজাফ্ফরের ছেলে। আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের শিবগঞ্জ ভাঙাব্রিজ এলাকায় সোনামসজিদগামী ট্রাক বিপরীত দিক থেকে আসা সাইকেলের আরোহী সাদেকুলকে চাপা দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে।
ফরিদপুরে এক ট্রাফিক পুলিশ:
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর শহরের নূরু মিয়া বাইপাস সড়কের পিয়ারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিপরীতমুখী দুটি ট্রাকের মধ্যে পড়ে সরোজ কুমার রায় (৫৮) নামের এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) নিহত হন।
মঠবাড়িয়ায় বাসের চাকায় হেলপার:
মঠবাড়িয়া-চরখালী-পিরোজপুর সড়কের ঝাউতলায় গতকাল সকাল ৯টায় বাসচাপায় মো. শাহ জালাল মিয়া (২৮) নিহত হন। তিনি ওই বাসটির বাসের হেলপার ছিলেন। জানা যায়, মঠবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস পিরোজপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পার হওয়ার সময় ঝাউতলা বাজারসংলগ্ন সেতুতে সেটি ধাক্কা খায়। তখন হেলপার শাহ জালাল ছিটকে পড়ে চাকায় পিষ্ট হন। উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তিনি মারা যান।
গৌরীপুরে দুই সিএনজির সংঘর্ষে এক মহিলা:
ময়মনসিংহের গৌরীপুর-রামগোপালপুর সড়কের ভবানীপুরে বিপরীতমুখী দুটি যাত্রীবাহী সিএনজির সংঘর্ষে একজন মহিলা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচজন। গতকাল সকাল ৯টায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত যাত্রীর নাম মনোয়ারা আক্তার। তিনি ভবানীপুরের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। আহতদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মিরসরাইয়ে যাত্রীবাহী বাস উল্টে খালে:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিঠাছরা বাইপাসে একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী জোনাকী পরিবহন নামের একটি বাস খালে পড়ে যায়। এতে ১৫ যাত্রী আহত হয়।
চলতি মাসের কয়েকটি বড় দুর্ঘটনা:
গত মঙ্গলবার বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কে ১০ জনসহ ছয় স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৬ ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটে। মহাসড়কের ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বিশ্বাসবাড়ীতে যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে নারী, শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়।
গত শনিবার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়। ওই দিন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উত্তর সাতকানিয়ায় চট্টগ্রামমুখী একটি বাস অন্য একটি বাসের আগে যেতে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে ছয়জনের প্রাণহানি ঘটে।
গত ১৬ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মা-মেয়েসহ আটজনের প্রাণহানি ঘটে। মহাসড়কের সুতাংয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার থেকে জিপ ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অন্তত ২০ জন যাত্রী বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সুতাং সেতুর কাছে ঢাকাগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এরই মধ্যে পেছনে থাকা একটি জিপ ও বালুবোঝাই একটি ট্রাক্টর ওই অটোরিকশার ওপর আছড়ে পড়ে। এতে জিপ ও অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
১২ ডিসেম্বর যশোর-চৌগাছা সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটে। যশোরে যাওয়ার পথে ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ‘আলমসাধু’র পেছনে একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
৭ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগরীর কাটাখালীতে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ইসলাম পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে শিক্ষার্থীবাহী আরেকটি বাসের সংঘর্ষে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। কলেজবাসটি ইসলাম পরিবহনের বাসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, দেশে দিনে কমপক্ষে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রায় ৪১ শতাংশ ঘটছে বাসস্ট্যান্ড ও ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে বাজার এলাকায়। বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ জেলার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ। মহাসড়কের মাত্র ৪ শতাংশ ত্রুটিপূর্ণ অংশে ৩৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে।