স্বস্তিতে মৌলভীবাজারের চা বাগান মালিকরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৪:২৩,অপরাহ্ন ০২ এপ্রিল ২০১৫
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
বৃষ্টি হওয়াতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন চা-বাগানের মালিকরা। প্রচণ্ড খরায় চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গলসহ জেলার বিভিন্ন চা-বাগানে সময় মতো চায়ের কুঁড়ি গজায়নি। খরায় বয়স্ক গাছসহ চায়ের চারাগাছ শুকিয়ে যাওয়ায় এবার চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাগান কর্তৃপক্ষরা। এই বৃষ্টিকে তারা তাই স্বস্তির বৃষ্টি হিসেবেই দেখছেন।
বিভিন্ন চা-বাগান সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর মার্চের শুরু থেকে চায়ের কুঁড়ি সংগ্রহ শুরু হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। চায়ের কুঁড়ি গজানোর জন্য ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও প্রচুর বৃষ্টির পানির দরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র একদিন বৃষ্টি হয়।
শ্রীমঙ্গল জেরিন চা-বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা বলেন, ‘বৃষ্টি না হওযায় এখনও চায়ের কুঁড়ি গজায়নি। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী চারা গাছসহ বয়স্ক অনেক গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। মার্চের শুরুতেই কুঁড়ি সংগ্রহ শুরু করার কথা। কিন্তু তা পিছিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।
তিনি আরও জানান, তীব্র খরায় রেড স্পাইডারের (লাল মাকড়াসা) আক্রমণেরও শঙ্কা থাকে। এই মাকড়সা চা-গাছের জীবনচক্র নষ্ট করে দেয়। শ্রীমঙ্গল ফিনলে টি কোম্পানি সিলেট জোনের জিএম শিবলী আহমদ বলেন, ‘গত বছরের ১১ মার্চ থেকে বাগানে চায়ের কুড়িঁ সংগ্রহ শুরু হয়েছিল। বৃষ্টির অভাবে কুঁড়ি গজানো এখনও শুরু হয়নি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত কিছু বৃষ্টিপাত হয়েছিল। চায়ের কুঁড়ি গজানোর জন্য শুভ লক্ষণ হিসেবে ওই বৃষ্টিকে গোল্ডেন রেইন (সোনালি বৃষ্টি) মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর বৃষ্টি হয়নি। এ ছাড়া বাগানের পুকুর-কুয়াতে পানি নেই। ফলে সেচসুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে না।’
জুড়ীর ফুলতলা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আফজাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এ পর্যন্ত মাত্র ছয় মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কুঁড়ি গজানোর জন্য ২০-২৫ মিলিমিটার বৃষ্টির প্রয়োজন। ভ্যালির আওতাধীন কোনও বাগানেই এখনো কুঁড়ি সংগ্রহ শুরু হয়নি। এ কারণে সব বাগানেই গত বছরের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করে উৎপাদন কম হবে।’
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক মাইনু উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আবহাওয়াজনিত কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টি হতো। এপ্রিলে বৃষ্টি না হওয়ার আশঙ্কা করছেন । বৃষ্টি না হলে চায়ের কুঁড়ি গজাবে না। এ অবস্থায় বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সহকারী রুহুল আমিন বলেন, ‘সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জেলায় দুই দিনে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বছরে এই অঞ্চলে ২৩০ থেকে ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।’