সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৫৪:৩২,অপরাহ্ন ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
শনিবার সন্ধ্যায় আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় চলমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের সহিংসতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে মানবরূপী দানব আক্রমণ করে জ্যান্ত মানুষগুলোতে পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মারছে। এর চেয়ে জঘন্যকাজ আর কিছুই হতে পারে না। এটা কোনো রাজনীতি নয়। এটা সম্পূর্ণ খুন করা, মানুষ হত্যা করা। এ অবস্থা কখনও চলতে দেওয়া যায় না। এ জন্য গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতি কখনও কারো কাছে পরাজয় মানে না, পরাভব মানে না। যে কোনো প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস আমাদের রয়েছে। সেই ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেবে কিভাবে আমরা এ অবস্থা মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাবো এবং আমরা তা পারবো।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার মধ্যে একটা সচেতনতা সৃষ্টি করা। বাঙালি জাতি একবার সচেতন হয়ে রুখে দাঁড়ালে তখন যেকোনো অবস্থার মোকাবেলা আমরা করতে পারি। এ দুর্যোগ ইনশাল্লাহ আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে বাস্তবতা বুঝতে হবে। এ হত্যা সাধারণ হত্যা নয়। এটা স্বাধীনতার ওপর আঘাত, আমার ভাষার ওপর আঘাত, আমার অস্তিত্ববোধের ওপর আঘাত, আমরা বাঙালি এটা বাঙালি জাতির ওপর আঘাত। কাজেই এ আঘাত আমাদের প্রতিঘাত দিয়ে ফিরিয়ে দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঝে মাঝে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও মোকাবেলা করতে হয়। এ মুহূর্তে আমরা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে চলছি।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জানি না তারা কার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এটা কি তাদের পছন্দ না? বাংলা ভাষা এটা তাদের পছন্দ না। অর্থাৎ বাঙালি জাতি বিশ্বব্যাপী যে মর্যাদা পেয়েছে সেই মর্যাদাটাই মনে হয় এ গোষ্ঠী ধরে রাখতে চায় না।’
অমর ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস পালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এমন একটি দিবস আমাদের জীবনে দলমত নির্বিশেষে সকলস্তরের মানুষ এ দিবসটিকে অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে পালন করে থাকেন। এ এক অভূতপূর্ব চেতনা। নিজের দেশকে ভালোবাসা, নিজের মাতৃভাষাকে ভালোবাসার দৃষ্টান্ত আমরা বাঙালি জাতি সৃষ্টি করেছি। এটা অনেকের হয়তো ভালো লাগে না। অনেকে হয়তো শহীদ মিনারে যেতে চায় না।’
শহীদদের প্রতি স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। আর ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে আমরা এ স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’ বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ, প্রচার ও তার চর্চা করার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি বলেন, এটা করা আমাদের একান্তভাবে প্রয়োজন। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি এবং যাবো।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয় ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষেও সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় লেখিকা সেলিনা হোসেন তার বক্তব্যে ইউনেস্কোর সঙ্গে মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ভাষা ও সাহিত্য পুরস্কার চালু করার প্রস্তাব দেন।
এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ভাষা ও সাহিত্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার চালু করার উদ্যোগ নিতে বলেন সংশ্লিষ্টদের। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিন্নাত ইমতিয়াজ আলী।