সরকার পতন আন্দোলন : ৫ জানুয়ারি থেকে ২০ দলের বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১১:৪৯,অপরাহ্ন ০৭ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের দাবি প্রহসনের নির্বাচনের প্রথম বর্ষ ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু করতে পারে সরকার পতনের নতুন আন্দোলন। এদিন দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ করবে ২০ দলীয় জোট।
কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকার মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আগামী মার্চে নতুন সংসদ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করার লক্ষ্যে এ মহাসমাবেশ করতে পারে বলে জোট সূত্রে জানা গেছে।
এবারের আন্দোলন কঠিন থেকে কঠিনতর হতে পারে বলে জানা গেছে। মহাসমাবেশ দিয়ে আন্দোলন শুরু হলেও ধীরে ধীরে হরতাল, অবরোধ, রেলপথ ও জলপথ অবরোধের মত কঠিন কর্মসূচি দিতে পারে এই জোট।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ-জামায়াত এবং সমমনাদের তৈরি ‘জনতার মঞ্চ’-এর আদলে না হলেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সিভিল প্রশাসনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে পাশে চায় বিএনপি। ২০-দলীয় জোটের পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল, সিভিল প্রশাসনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনকে এক প্লাটফর্মে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সরকার বিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে তিনি প্রায় প্রতিদিনই সাবেক আমলাদের সঙ্গে কথা বলছেন। গুলশানে নিজ কার্যালয়ে তাদের নিয়ে প্রায় বৈঠকও করছেন। তার এ বৈঠক নিয়ে একটি মহল ধুম্রজালের সৃষ্টি করেছে। এ মহলটি সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে জনতার মঞ্চ তৈরি করার কথা বেমালুম ভুলে গেছেন।
ডিসেম্বর জুড়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ড শেষ করার চিন্তা বিএনপির। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের পক্ষে জনসম্পৃকতা বাড়াতে ২০ দলীয় জোট বিভাগীয় ৯টি শহরে জনসভা করে।
এসব জনসভায় একটির চেয়ে অন্যটিতে লোক সমাগম বেশি হওয়ায় বিএনপির হাই কমান্ডসহ নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলে মনে করা হয়। এ মাসে বিভাগীয় শহরগুলোয় রোডর্মাচসহ কয়েকটি জনসভাও করার পরিকল্পনা রয়েছে ২০ দলের। দলকে আরো শক্তিশালী করতে ডিসেম্বরে নতুন করে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে।
এছাড়া ঢাকা মহানগরী বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কমিটির পূর্নগঠন শেষ। যে কোন সময়ে ঘোষণা হতে পারে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের কমিটি।
জানা গেছে, মার্চের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করতে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাবেক অর্ধশতাধিক আমলা সাক্ষাৎ করেন। একইভাবে দুই মাস ধরে বেগম জিয়া চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ অন্য পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাদের তার পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত ও ভোটারহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। বিতর্কিত ও এক তরফা নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে ৩২০ জন নেতা-কর্মী হত্যা এবং ৬৫ জন নেতাকর্মী গুম করার অভিযোগ তাদের। তাই ৫ জানুয়ারির প্রহসনমূলক, ভোটারবিহিীন নির্বাচনের দিনটিকে টার্গেট করেই সরকারকে ধাক্কা দিতে চায় বিএনপি জোট। এই দিন দেশের সকল বিভাগীয় শহরে স্থানীয়ভাবে মহাসমাবেশ করবে জোট। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সরকার পতন আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে এবার তিনি অগ্রভাগেই থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ’দেখবো পুলিশ কেমন করে গুলি চালায়।’ বাধা এলে তাৎক্ষণিকভাবে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করবেন বলেও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।
সূত্রমতে, গুলশান কার্যালয়ে যাওয়া সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, মার্চে নতুন নির্বাচন হবে। সেজন্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। বাধ্য না হলে সরকার নির্বাচন দেবে না। তাই সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পরামর্শ দেন তিনি। এজন্য কূটনৈতিক মহল থেকেও সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে। শুধু কি তাই? সরকারে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও গোপনে গোপনে যোগাযোগ রাখছেন। কারণ তারা প্রধানমন্ত্রীর কোন কোন উপদেষ্টার কর্মে রুষ্ট। এ উপদেষ্টারা তাদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করতে ছাড়ছেন না। এরাই বর্তমান সরকারের কাছে বিশ্বাসভাজন বলেও পরিচিত।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালও সম্প্রতি বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাই জানুয়ারি ও ফেব্রয়ারি টানা আন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। ডিসেম্বরজুড়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কমিটিগুলোর পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে।
আন্দোলন সর্ম্পকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, নতুন নির্বাচনের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলমান। এ আন্দোলনকে আরো গতিশীল করা হবে। আন্দোলনের রূপরেখা তৈরিতে রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশাজীবিদের সাথে আলাপ আলোচনা চলছে। রাজপথে আন্দোলন ছাড়া কোন পথ নেই। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই এই সরকারকে বিদায় করা হবে। তবে মাঠপর্যায়ের নেতাদের ভাবনা অনুযায়ী মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে বেশি সময় দিলে তারা জেঁকে বসতে পারে।