শেলা নদীতে জাহাজ ডুবি : কয়েক হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবনযাপন
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২৯:২০,অপরাহ্ন ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
গত ৯ ডিসেম্বর বাগেরহাট জেলার মংলার শেলা নদীতে তেলবাহী জাহাজ ‘সাউদার্ণ স্টার-৭’ ৩.৫৮ লাখ লিটার ফার্নেস তেল নিয়ে ডুবির পর থেকেই সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে ওই নদী থেকে সকল প্রকার জাহাজ চলাচল। এরফলে শেলা নদীর দুই পান্তে আটকা পড়েছে সহ¯্রাধিক পন্যবাহী জাহাজ। জাহাজগুলো বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বাগেরহাটের বিভিন্ন নদীতে ৭টি স্থানে নোঙর করা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাজে থাকা চালকেরা। নোঙর করা স্থানগুলো হল- বরিশাল, ঝালকাঠি, নলছিটি, কাউখালী, মাছুয়া এবং বাগেরহাটের সন্যাসী ও শরণখোলা। এসব স্থানে ৫ শতাধিক মালবোঝাই বিভিন্ন আকারের জাহাজ নোঙর করেছে, যেগুলো শেলা নদী অতিক্রম করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাবার অপেক্ষায় রয়েছে। জাহাজগুলোর অধিকাংশই ঢাকা ও চট্রগাম বিভাগের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে যেগুলোতে বালু, সিমেন্ট, পাথর, ক্লিংকার এমনকি খাদ্য সামগ্রী রয়েছে।
কাউখালীর সন্ধ্যা নদীতে কুমিয়ানা গ্রামে নোঙর করা জাহাজ ‘এমভি জালাল গিয়াস উদ্দীন’ এর মাস্টার মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান তিনি সিলেটের ছাতক থেকে সুপারক্রিট সিমেন্ট নিয়ে এসেছেন। যশোরের নওয়াপাড়া যাবার জন্য তিনি সন্ধ্যা নদীতে ১২ ডিসেম্বর থেকে অপেক্ষা করছেন। শেলা নদী বন্ধ থাকায় তার জাহাজের মত শত শত জাহাজ সন্ধ্যা, বলেশ্বর, কঁচা, সুগন্ধা নদীতে নোঙর করে রয়েছে। প্রান গ্রুপের খাদ্য পরিবহনকারী ‘মোহনপুর-১’ জাহাজে থাকা ডেলিভারি ম্যান মোঃ শহিদুল্লাহ জানান, তিনি ১৬ ডিসেম্বর থেকে কুমিয়ানা গ্রামের সন্ধ্যা নদীতে অবস্থান করছেন। তাদের জাহাজটি খুলনার ফুলতলা পৌছার উদ্দেশ্যে নরসিংদির ঘোরাশাল থেকে ১৩ ডিসেম্বর ছেড়ে এসেছে।
এদিকে জাহাজের রসদ ফুরিয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে জাহাজগুলোতে থাকা কয়েক হাজার কর্মচারীরা। তারা জানান, ৯ ডিসেম্বরের পর থেকেই তারা পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বাগেরহাটের বিভিন্ন নদীতে নোঙর করে রয়েছেন। ঘটনার পর প্রায় ৩ সপ্তাহের বেশি সময় তারা নদীতেই অবস্থান করায় তাদের সংগ্রহে থাকা খাবার ও টাকা পয়সা ফুরিয়ে গেছে। অন্যদিকে মালিকপক্ষও তাদের কোন প্রকার অর্থ সরবরাহ করছে না। জাহাজের মাল খালাস না হওয়া পর্যন্ত মালিকপক্ষ তাদের কোন প্রকার টাকা পয়সা সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন জাহাজে কর্মরত কর্মচারীরা।
জাহাজের কর্মচারীরা জানায়, জাহাজের আকার অনুসারে প্রত্যেক জাহাজে ৯-১৫ জন করে কর্মচারী রয়েছে। বর্তমানে তারা চরম অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। গতকাল কাউখালীর কুমিয়ানা গ্রামের সন্ধ্যা নদীতে গিয়ে ৪০ টিরও অধিক বিভিন্ন আকারের জাহাজ নোঙর করা অবস্থায় দেখা গেছে।
‘এমভি দেওয়ান-১’ এর সুকানি মোঃ শাহাদাৎ হোসেন জানান, তাদের কাছে চলার মত কোন টাকা নেই। যা ছিল তা এতদিনে ফুরিয়ে গেছে। বর্তমানে তারা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
অন্যদিকে জাহাজের কর্মচারীরা জানান, তারা পূর্বে ঘোষিয়াখালীর খালটি চলাচলের জন্য ব্যবহার করত। কিন্তু সেটি ভরাট হয়ে চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় সরকার, শেলা নদীটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। কিন্তু বর্তমানে শেলা নদীটি বন্ধ করে ঘোষিয়াখালী খালটি চালু করতে চাচ্ছে। তারা দাবি করেন, শেলা নদীটি বন্ধ করার আগে ঘোষিয়াখালী খালটি পুরোপুরিভাবে খনন করে চলাচল উপযোগী করা। তারপর শেলা নদীটি বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় দেশের অর্থনীতি মারত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হবে। তারা আরও জানান, শেলা নদীটি অন্তত পক্ষে ৪৮-৭২ ঘন্টার জন্য খুলে দেয়া হোক, যাতে করে নদীর দুই প্রান্তে অপেক্ষমান জাহাজগুলো তাদের গন্তব্যে পৌছাতে পারে।
এদিকে জাহাজে থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা সরকারের কাছে দাবি করেছেন, যাতে অতি দ্রুত শেলা নদীর সমস্যা সমাধান করে জাহাজে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিককে চরম ভোগান্তি থেকে তাদের সরকার রক্ষা করে। অন্যথায় তারা কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন ‘এমভি মেট্রোসেম-২’ এর চালক রাশেদুল ইসলাম। তিনি একজন জাহাজ শ্রমিক নেতা। তার দাবি রাজনৈতিক নেতারা শেলা নদী নিয়ে রাজনীতি করছেন এবং তাদের সীমাহীন ভোগান্তিতে ফেলেছেন।
উল্লেখ্য সহজে ও দূরত্ব কমাতে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ঝালকাঠির সুগন্ধা ও পিরোজপুরের সন্ধ্যা নদীকে সংযুক্তকারী গাবখান চ্যানেলটি ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ সরকারের আমলে চ্যানেলটি খনন করা হয়েছিল যা বাংলার ‘সুয়েজ খাল’ নামে পরিচিত।