রানা প্লাজা ধস : থামেনি স্বজনদের কান্না
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৬:২৮,অপরাহ্ন ২৩ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক :: ১২৭ কোটি টাকা এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে, যা রানাপ্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তদেরই প্রাপ্য। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই বছর পরও থামেনি নিহতদের পরিবারের কান্না, আহতদের আর্তচিৎকার। পঙ্গুত্ববরণ করে ঘরে পড়ে আছে অনেক শ্রমিক, অনেকে সেরে উঠলেও পায়নি চাকরি। শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ ক্ষতিপূরণ, আহত শ্রমিকদের নিয়মিত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, দায়ীদের শাস্তির মত বিষয়ে এখনো সুরাহা হয়নি৷ এসব বিষয়ে দ্রুততম সময়ে সম্মানজনক সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) -এর সম্মানীত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, রানা প্লাজার ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা অপসারণ করতে হবে। কারখানা পরিদর্শনকারী দল অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কমিটির (এনটিপিএ) কাজে সমন্বয় আনা প্রয়োজন। এছাড়া কারখানা সংস্কার কার্যক্রম কার্যকরভাবে সমাপ্ত করা, বিদেশি ক্রেতারা পোশাকের উচিত মূল্য দেওয়ার উপর গুরুত্ব দেন তিনি।
রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রতি। তবে সংগঠনটির সভাপতি আতিকুল ইসলাম এ অভিযোগের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, আমি সরকার ও কোন ব্যাংকের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণ করিনি। কোন নেতা বা নীতি নির্ধারক ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য দিলে বিষয়টি দেখা হবে।
তিনি বলেন, রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও ক্রেতারা ধারবাহিকভাবে কারখানা পরিদর্শন করেছে। কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্মপরিবেশের সর্বশেষ তথ্য প্রতিটি কারখানায় ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। শিরগিরই এ বিষয়টি একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ে আসা হবে। ফলে যে কোন সংস্থা যেকোন মূহুর্তে কারাখানার পরিবেশের হাল নাগাদ তথ্য দেখতে পারবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মিকাইল শিপার জানিয়েছেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর নিহতদের পরিবার এবং আহতদের প্রায় ১৮৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে দেওয়া হয়েছে ৭৬ কোটি টাকা। রানা প্লাজার একটি গার্মেন্ট কারখানার দায়িত্ব নিয়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান প্রাইমার্ক দিয়েছে ৮৬ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে প্রায় ২২ কোটি টাকা।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দুই বছর উপলক্ষে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কয়েকটি গবেষণা সংস্থা। সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে ১৫৯ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। ফলে তাদের পরিবার অর্থ সহায়তা পাচ্ছে না। গ্রামে থাকা শ্রমিকরা কম সুবিধা পাচ্ছেন। দ্বিতীয় বছরে কর্মসংস্থানের অগ্রগতি হয়েছে। স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক গার্মেন্টে যোগ দিলেও ১২ শতাধিক শ্রমিক নিজেরা ব্যবসা শুরু করেছেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২৭ কোটি টাকা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যে এ পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ১৯ কোটি টাকা। এই তহবিলের ১২৭ কোটি টাকা এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে, যা ক্ষতিগ্রস্তদেরই প্রাপ্য।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেছেন, গার্মেন্টসের বিকল্প থাকলে ৮০ শতাংশ শ্রমিক এ পেশা ছেড়ে দিতেন। শ্রমিকরা আনন্দের সঙ্গে গার্মেন্টসের কাজ করতে ছুটে আসছে না। এ খাতে এখনো শ্রমিকদের জীবন ও কর্মপরিবেশ নিম্নমানের।
রানা প্লাজা ও তাজরীনের ‘খুনী’ মালিকদের হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ ও অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দেওয়া, ২৪ এপ্রিলকে শোক দিবস ঘোষণা করা, নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের ৪৮ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক কারখানা গড়ে তোলা, ইপিজেড এলাকাসহ সব এলাকায় ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং শ্রমিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন মোশরেফা মিশু।