রাজশাহীতে মিষ্টিমুখে বর্ষবরণ বস্তির শিশুদের
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৬:৩৩,অপরাহ্ন ১৫ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
কেউ হাত দিয়ে মিষ্টি ধরে আছে। কারও বা গালভর্তি মিষ্টি। কারও আবার মুখ বেয়ে পড়ছে মিষ্টির রস। পহেলা বৈশাখের উৎসব ‘কী’ জানা নেই। লতা-পতা খাওয়ার তেঁতো মুখে হঠাৎ মিষ্টির স্বাদ। তাতেই তো অবর্ণনীয় সুখ। অন্য কিছু ভাবার ফুরসত নেই কারও কাছেই। মুখের মধ্যে মিষ্টি পুরেই কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ। যেনো আলো-আঁধারে এক অনন্য স্বাদের ভুবনে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। কিছুক্ষণের জন্য এমন পরিবেশই তৈরি হয়েছিল রাজশাহী নগরীর ভদ্রা বস্তির শিশুদের মধ্যে।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা প্রায় ১১টা। কোনো সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠন নয়, একান্ত নিজেদের ভালোলাগা থেকে হঠাৎ করেই এ মিষ্টি উৎসবের আয়োজন করে কয়েকজন তরুণ-তরুণী। তাদের এই ছোট্ট উদ্যোগেই আনন্দে উদ্বেলিত ছিন্নমূল শিশুরা। কচি-কাঁচা শিশুদের সঙ্গে মিষ্টি খেলো বস্তির বড়রাও। অনেকদিন পর মিষ্টির স্বাদ পেয়ে তাদের অনেকেই ছিল উৎফুল্ল।
বস্তিতে থাকা শিশু মৌসুমী, আকতারা ও রিয়াজ জানালো বৈশাখ কী তা জানা নেই তাদের। পান্তাভাত ওদের প্রায় দিনের সকালের খাবার। পান্তার সঙ্গে লবণ, পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ দিয়েই বেশিরভাগ দিন শুরু হয় তাদের। রাতের খাবার শেষে বেঁচে যাওয়া ভাতে পানি দিয়ে তৈরি করা পান্তাভাত যাদের প্রতিদিনের সকালের আহার, বৈশাখের অভিলাসী পান্তা তাদের কাছে নতুন কিছু নয়। আর ইলিশ, সে তো অধরা তাদের জন্য। অনেক দিন পর তাই মিষ্টি খেতে পেরেই বেজায় খুশি তারা।
এ মিষ্টি উৎসবের আয়োজকদের একজন নার্গিস সোমা। রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক। নিজেও একজন শিল্পী। শিল্পকর্ম নিয়েই মেতে থাকেন সারাক্ষণ। বরাবরই তার এমন কাজে সাহস যোগান আরেক তরুণ শাহরিয়ার চয়ন ও জিহাদ খান। নগরের অভিজাত মানুষের আভাসস্থল ভদ্রা আবাসিক এলাকার পাশেই গড়ে ওঠা বস্তির শিশুসহ অন্ত ২০০ জনকে আজ মিষ্টি মুখ করান তারা।
নার্গিস সোমা জানালেন, প্রতিটি উৎসবেই তারা বস্তির শিশুদের জন্য কিছু না কিছু একটা করে থাকেন। মনের একান্ত ভালোলাগা থেকেই তাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। এবার পান্তা ইলিশ না দিয়ে তারা আয়োজন করেন মিষ্টি বিতরণের।
তার মতে, অবহেলিত এই শিশুরা সচরাচর মিষ্টি খাওয়া থেকে অনেক দূরে থাকে। উপলক্ষ এলে কখনও কখনও হয়তো তাদেরও ইচ্ছে জাগে মিষ্টি খাওয়ার। সেজন্যই দু’সহযোগীকে নিয়ে ভদ্রা বস্তির ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে ও তাদের এই ‘মিষ্টি উৎসব’।
এছাড়া, প্রতি ঈদে নিজেদের পকেটমানি থেকে সাধ্যমত পোশাক দিয়ে থাকেন তারা। গত ইংরেজি নববর্ষেও বস্তির শিশুদের জন্য উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করেছিলেন তারা।