নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েই কপাল পুড়েছে শামীমা নূর পাপিয়ার। নরসিংদীর যুব মহিলা লীগের নারী আসনে গতবছর মহিলা এমপি হতে চেয়েছিলেন, মহিলা এমপি হবার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েছিলেন। যুব মহিলা লীগের দুজন নারী নেত্রী তাঁর জন্য তদবিরও করেছিলেন। এই সূত্র ধরে পাপিয়া মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন এবং মনোনয়ন জমাও দিয়েছিলেন। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশেই এই শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছিল এবং শুদ্ধি অভিযানের পর থেকে আওয়ামী লীগ কতগুলো সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল। তা হলো যারাই মনোনয়ন চাইবে, তাঁদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হবে। অন্তত তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা তাঁরা কিভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, এলাকায় কি রকম কাজকর্ম করেন, তাঁদের কোন বদনাম আছে কিনা বা তাঁরা কোন দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে কোন প্রকার অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আছে কিনা এসব ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া।
যেহেতু পাপিয়া মনোনয়ন চেয়েছিলেন, সেহেতু পাপিয়ার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হয় এবং জানা গেছে যে, এই মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য পাপিয়ার পক্ষে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু যেহেতু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের ত্যাগী-পরীক্ষিতদেরকে মনোনয়ন দেবার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান গ্রহন করলে পাপিয়ার শিকে মনোনয়ন জোটেনি।
মনোনয়ন না পেলে কি হবে, এখান থেকেই কপাল পুড়তে শুরু করে, যেহেতু পাপিয়া আবেদন দিয়েছিল, সেহেতু পাপিয়ার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া শুরু করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। খোঁজ-খবর নিতে গেলে নরসিংসীতে কেএমসি বাহিনীর কথা প্রথম জানে একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং সেখান থেকেই প্রাথমিক তথ্য পায়। এরপর কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোতে থাকল। দেখা যায়, পাপিয়া নানারকম টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, দলে প্রভাব বিস্তার করা এবং নরসিংদীতে নানারকম অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রায় তিনমাস আগে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এই ব্যাপারে আরো গভীর তদন্ত করে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দেন।
এর মধ্যে পাপিয়া হোটেল ওয়েস্টিনে স্থায়ী ঠিকানা গড়েন এবং আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এরপর ওয়েস্টিনে যায় এবং ওয়েস্টিনে পাপিয়া কিভাবে আছে এবং পাপিয়া কিভাবে বিল পরিশোধ করে ইত্যাদি তথ্য-প্রমাণ উদ্ঘাটন করে। আর এইসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর গোয়েন্দাসংস্থাগুলো পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এই সময়ে পাপিয়ার একজন প্রিয়ভাজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা পাপিয়াকে ফোন করে জানান যে তাঁর ব্যাপারে তদন্ত চলছে এবং সরকারের হাইকমান্ড তাঁর ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যেতে পারে। এমন তথ্য পেয়েই পাপিয়া ব্যাংককে যাবার প্রস্তুতি গ্রহণ করে কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে তিনি গ্রেপ্তার হলেন। একাধিক সংস্থাগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোন মনোনয়ন বা কমিটিতে নেয়ার পূর্বে এখন কতগুলো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করছেন। যে কেউ আওয়ামী লীগের কমিটিতে যোগদান করতে গেলে দেখা হবে।
প্রথমত, তিনি কবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন, তিনি আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে অন্য কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত আছে কিনা।
দ্বিতীয়ত, তাঁর ব্যাপারে কোন নেতিবাচক কথাবার্তা আছে কিনা এবং এলাকায় তাঁর অবস্থান কেমন।
এই সুনির্দিষ্ট নীতিমালার কারণেই পাপিয়া ধরা পড়েছে। শুধু পাপিয়া নয়, ঐ সময়ে যারা মনোনয়ন চেয়েছিল কিন্তু মনোনয়ন পায়নি এরকম অনেকের ব্যাপারেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তদন্ত করছে এবং তাঁরাও গোয়েন্দাসংস্থাকারীদের নজরে আছে এবং যেকোন সময় তাঁরাও আইনের আওতায় এসেছিল।
অন্যদিকে যারা পাপিয়াকে মনোনয়ন দেবার ব্যাপারে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল এবং পাপিয়া যেন মনোনয়ন পায়, সে ব্যাপারে দেন-দরবার করেছিল- তাঁদের পরিচয়ও প্রধানমন্ত্রীর জানা আছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে নির্মোহ তদন্ত করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী।