ব্রিটেনে ফিরতে চান আইএস চিকিৎসক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আনোয়ার
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৮:৩৮,অপরাহ্ন ০২ মার্চ ২০১৯
নিউজ ডেস্ক:: ব্রিটিশ ফার্মাসিস্ট আনোয়ার মিয়া দীর্ঘদিন আইএস যোদ্ধাদের চিকিসা করার পর এখন স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে দেশে ফিরতে চান। সোমবার রাতে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের এ ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আনোয়ার।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রিটেনের ব্রিমিংহাম শহর থেকে সিরিয়া পালিয়ে গিয়েছিলেন মোহাম্মদ আনোয়ার মিয়া (৪০)। সেখানে তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যোগ দেন।তবে আনোয়ার দাবি করেন, তিনি ওই গোষ্ঠীর সঙ্গে কখনই যোগ দেননি, কেবল ‘মানবিক কর্ম’করেছেন। আর মানবিক কর্ম বলতে তিনি আহত আইএস যোদ্ধাদের চিকিৎসা করাকেই বুঝিয়েছেন।
আনোয়ার সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্য ছাড়ার আগে থাকতেন বার্মিংহামে। ভুয়া কর্মীর নাম সৃষ্টি করে বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করে বাড়তি টাকা আয়ের অভিযোগে তার আগের বছর তার ফার্মাসিস্ট লাইসেন্স বাতিল করা হয়।
আনোয়ার গত চার বছর ধরে সিরিয়ায় আইএসের নিয়ন্ত্রিত মায়াদিন শহরে ছিলেন। আনোয়ারের দাবি, সেখানে তিনি অর্থেপেডিক সার্জন হিসেবে কাজ করতেন। যদিও এ বিষয়ে তার কোনো ডিগ্রি ছিলো না। তবে তিনি বলেন, তিনি এ কাজ শিখেন বই পড়ে।সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের কথিত খিলাফতে আনোয়ারের নতুন নাম হয় আবু ওবাইদা আল-ব্রিটানিয়া।
আনোয়ার গত অগাস্টে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আর নয় মাসের মেয়ে মরিয়মকে নিয়ে মোটরবাইকে করে সিরিয়ার মায়াদিন থেকে পালানোর সময় ইরাক সীমান্তের কাছে কুর্দি বাহিনীর হাতে আটক হন আনোয়ার।পরে সিরীয় বাহিনী তার স্ত্রী ও মেয়েকে সরিয়ে নিলে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান আনোয়ার। ফলে দ্বিতীয় সন্তানকে কখনও তিনি দেখেননি।
তার স্ত্রী সন্তানরা এখন কোথায় আছে সে বিষয়েও কিছু জানেন না আনোয়ার। কিন্তু তিনি বলেন, তার সন্তানরা বাবার সূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক, তাদের নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে ফিরতে চান।কুর্দ যোদ্ধাদের হাতে সন্দেহভাজন যে ছয়জন ব্রিটিশ নাগরিক বন্দি হয়েছে তাদেরই একজন আনোয়ার।
‘আমি বাড়ি ফিরতে চাই। আমি একজন গর্বিত ব্রিটিশ নাগরিক। ব্রিটেন মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেয়, এটা খুবই ভালো। আমি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ব্রিটেনে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাই। যদি তারা আমার স্ত্রীকে হেলথকেয়ার সুবিধা দিতে রাজি নাও হয়, কেবল থাকার অনুমতি দিলেই আমি খুশি। আমি আমার জীবনে কখনও কোনো সুবিধা চাইনি। আমি কাজ করে খেয়েছি, নিয়মিত কর দিয়েছি।’
আনোয়ার বলেন, সকল ব্রিটিশ নাগরিককে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব।কখনও কোনো অপরাধে জড়াননি দাবি করে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি জন সাধারনের জন্য হুমকি নই। কিন্তু তারা যদি আমাকে নিয়ে ভয় পায়, পুনর্বাসন কেন্দ্রে যেতেও আমার আপত্তি নেই। তারা যদি আমাকে শাস্তি দিতে চায়, তাতেও আমি রাজি। তারা যদি বলে যে আমাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, তাতেও আমি রাজি।’
সিরিয়ায় যাওয়ার জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে আনোয়ার বলেছেন, সময়মত ফেরার সুযোগ থাকলে তিনি আর সিরিয়া যেতেন না।শামীমা বেগমের মত আনোয়ার মিয়াও জন্মেছেন ব্রিটেনে, তবে তার মা জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি।তবে আনোয়ার বলেছেন, তিনি কেবল ব্রিটেনেরই নাগরিক, বাংলাদেশি কোনো পাসপোর্ট তার কাছে নেই।
‘আমি জীবনে দুই কি তিনবার বাংলাদেশে গেছি। বাংলাদেশে পাঠানোর বদলে আমি বরং জেলখানায় থাকতে রাজি।’মাকে তিন সপ্তাহের জন্য বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ২০১৪ সালে নিরুদ্দেশ হন আনোয়ার মিয়া। এরপর আর মায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি।
ওই বছর সেপ্টেম্বরে তুরস্ক হয়ে তিনি সিরিয়ায় পৌঁছান। আরবি বলতে না পারলেও মায়াদিনে এক হাসপাতালে প্রায় চার বছর কাজ করার কথা বলেছেন তিনি।যে সময়টায় তিনি সেখানে ছিলেন, তখন সেখানে বহু লোকের শিরোশ্ছেদ করেছে আইএস। তবে সেসব ঘটনা জানেন না বলে দাবি করেছেন আনোয়ার।২০১৭ সালে ওই হাসপাতালে এক সিরীয় কিশোরীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাকে বিয়ে করেন আনোয়ার।
তুলে আনা মেয়েদের ‘বিয়ে করা’ অথবা যৌনদাসী বানিয়ে রাখা আইএস সদস্যদের মধ্যে ছিল একটি নিয়মিত ঘটনা। তবে আনোয়ারের দাবি, তার স্ত্রীর সঙ্গে আইএস এর কোনো সম্পর্ক নেই। একজন ভালো মনে মানুষ বলেই তিনি তাকে বিয়ে করেছেন। তিনি আরো দাবি করেন, ‘সম্ভবত আমার স্ত্রী সন্তান জন্ম দিয়েছে। বাচ্চাটি ছেলে না মেয়ে তা আমি জানি না।তাদের কোথায় রাখা হয়েছে সেটিও আমার অজানা।’
সূত্র: ডেইলি মেইল