বিপর্যয়ের মুখে এসএসসি পরীক্ষা, অনিশ্চয়তায় লাখো শিক্ষার্থী
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫২:২০,অপরাহ্ন ৩১ জানুয়ারি ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
২০ দলীয় জোটের চলমান অবরোধের মধ্যেই ৭২ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে আসন্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা। একইসঙ্গে অনিশ্চয়তায় ভুগতে হচ্ছে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে। চলমান সঙ্কটের জন্য বিএনপি দায়ী নয় বলে দাবি করে বিএনপি নেতারা বলছেন আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি থেকে পিছু হটবেন না। এই রাজনৈতিক স্থবিরতা থেকে উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ তার গদি থেকে সড়ে দাঁড়ানো-বলে মনে করছেন তারা। দলের ভেতরকার শীর্ষ নেতারা বিডি টোয়েন্টিফোরকে বলেন, সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত অবরোধের সাথে সাথে হরতালও নিয়মিত ভিত্তিতে জারি করা হবে।
গতকাল বিকেল ২টা ৪০ মিনিটে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির যুঘ্ন মহাসচিব প্রধানমন্ত্রীকে তার ক্ষমতা থেকে সড়ে দাঁড়িয়ে দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার পথ প্রস্তুত করার আহ্বান জানান। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আহ্বানের উত্তরে রিজভী বলেন, শুধুমাত্র অবৈধ সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমেই দেশেরে শান্তি ও স্থিতিশীলতাপুনরুদ্ধার করা যেতে পারে। হিসাব মতে, এবারকার মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় প্রায় ১৫ লক্ষ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে।
২৮ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঠিক সময়ই সারা দেশে আসন্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সতর্ক করে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোন ষড়যন্ত্রই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা রুখতে পারবেনা। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা ২০ দলীয় জোটের নেতাদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন সদয় ও মূল্যবোধ আশা করতে পারি। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করে গতকাল বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সিডিউল পরবির্তন করা হবে কি না এ বিষয়ে তার মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর আগে শিক্ষামন্ত্রণালয় সুত্র বলেছিল, সরকার অবরোধের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু হরতালে পরীক্ষার তারিখে পরিবর্তন করা হবে।
অপরদিকে রিজভী বলেন, জনদুর্ভোগের মূল কারণ হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মাত্র ৫ ভাগ ভোট নিয়ে ক্ষামতায় বসেছে তারা। শিগগিরই যদি এই অবৈধ সরকার ক্ষমতা থেকে সড়ে দাঁড়ায়, তবেই দেশে শান্তি-শৃংখলা ফিরে আসবে। গতকাল বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে এক প্রেস রিলিজে রিজভী ২০ দলের পক্ষ থেকে সারা দেশে ৭২ ঘন্টার হরতাল আহ্বান করেন। ২১ জন বিরোধী দলের নেতাকে হত্যা এবং ১৫০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অবৈধ মামলার প্রতিবাদে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭২ ঘন্টার হরতাল পালনের ঘোষণা দেন রিজভী। প্রেস রিলিজে রিজভী জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে এমন হুমকির প্রতিবাদে আগামীকাল (১ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৬টা থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ হরতাল কর্মসূচি চলবে। এর আগে, বিরোধী জোটের ডাকা ঢাকায় ৪৮ ঘন্টার হরতালের কারণে ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
তবে, হরতাল আহ্বানের আগে বিএনপি জোট ও-লেভেল পরীক্ষাকে হরতালের আওতামুক্ত ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এখন তারা তাদের এই ঘোষণা থেকে সঁড়ে এসেছে। সরকারকে দোষারোপ করে তারা বলছে, কেবল সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বিডি টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এটা রাজনৈতিক সমস্যা। এটা কোন একাডেমিক কিংবা প্রশাসনিক সমস্যা নয়। তাই এই সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক ভাবেই সমাধান করতে হবে যা শুধুমাত্র সরকারই করতে পারেন।
তিনি বলেন, অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে একাডেমিক এবং অর্থনৈতিক দিকটাও এখন স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্তিতি শুধু শিক্ষার্থীদেরকেই ঝুঁকিতে ফেলছেনা অন্যান্য সেকটরের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও এই একই সমস্যায় জর্জরিত। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর মা মমতাজ বেগম বলেন, আমরা খুইই উদ্বিগ্ন। বুঝতে পারছিনা এই মুহুর্তে আমরা কি করবো। পরীক্ষার মধ্যে কী আমাদের সন্তানদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া উচিৎ হবে?
আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, সরকার কীভাবে ছাত্রদের নিরাপত্তা বিধান করবে? আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষাজীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে বিরোধী দলরা কী উপকার পাবে? আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে এই বিষয়গুলো দু’পক্ষকেই পরিষ্কার করতে হবে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে পরিবহণ ধর্মঘট ডেকেছে। একইসঙ্গে সরকার পতনের আন্দোলনকে গতিশীল করতে ধাপে ধাপে দেয়া হচ্ছে হরতাল কর্মসূচি। একজন সিনিয়র বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারাও সরকারি পরীক্ষার সময় হরতাল অবরোধ দিয়েছে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য।
উল্লেখ্য, বিএনপি-জামায়াত জোট গত ২০১৩ সালের এসএসসি এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় হরতালের পাশাপাশি পালন করেছে বিক্ষোভ-সমাবেশ ।