বাবা বলেছেন ১৫১ আসন নয়, ২০০ আসন পাব: এরশাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২:০৯:৪৯,অপরাহ্ন ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, তাঁদের লক্ষ্য সংসদের ১৫১ আসন। তবে তাঁর ‘বাবা’ বলেছেন, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে ১৫১ আসন নয়, তাঁরা পাবেন ২০০ আসন।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘সংবিধান রক্ষা দিবস’ উপলক্ষে দলটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। অবশ্য জাপা বাদে অন্য দলগুলো এই দিনটিকে (৬ ডিসেম্বর) ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, ‘এখন মানুষ চায় মুক্তি। মানুষ জেগে উঠেছে। আমরাও জেগে উঠেছি। এখন জাতীয় পার্টির স্লোগান হবে—জাতীয় পার্টি ১৫১। বাবা বলেছেন, ১৫১ না, আমরা ২০০ আসন পাব। আমরা পারব। আমরা পারব।’
তবে এই ‘বাবা’ বলতে তিনি কার কথা বুঝিয়েছেন, তা তিনি পরিষ্কার করে বলেননি।
সরকারকে উদ্দেশ করে এরশাদ বলেন, ‘শুনতে পাচ্ছি বিদ্যুতের বিল বাড়ানো হবে। গ্যাসের বিলও বাড়ানো হবে। কেন বাড়ানো হবে? এই এক বছরে বিদেশে কী পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে; কত টাকা গেছে; কারা এসব টাকা রেখে এসেছে; তার খবর আমরা জানতে চাই। অনুরোধ করব, আবেদন করব, সেই টাকা ফিরিয়ে আনুন। ভর্তুকি দিন। বিদ্যুতের বিল, গ্যাসের বিলের দাম বাড়াবেন না।’ তিনি সরকারের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় কতজন বাড়ি করেছেন, সেকেন্ড সিটিজেনশিপ নিয়েছেন, তার খবরও আমরা জানতে চাই। তারা কত লাখ টাকা সেখানে জমা দিয়েছেন, সেটা প্রকাশ করুন। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের দাম বাড়িয়ে গরিব মানুষের দুর্ভোগ বাড়াবেন না।’
‘মানুষ আপনাদের ঘৃণা করে’
সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠককে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অবহিত করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘এখন ষড়যন্ত্র করেন। ঘরে মিটিং করেন। কোনো লাভ হবে না। মানুষ আপনাদের ঘৃণা করছে। পরিত্যাগ করেছে।’
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘৬ ডিসেম্বর নিয়ে অনেক কথা হয়। কেউ বলে স্বৈরাচার পতন দিবস, আমরা বলি সংবিধান রক্ষা দিবস। কারণ আমার উপরাষ্ট্রপতি আমার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। এরপর আমি জাস্টিস সাহাবুদ্দিনকে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলাম। এরপর আমি উপরাষ্ট্রপতির কাছে আমার পদত্যাগপত্র দাখিল করেছিলাম। সবকিছু হয়েছে সংবিধান অনুযায়ী। তাই এই দিন চিরকাল সংবিধান রক্ষা দিবস উপলক্ষে পালিত হবে। এটা স্বৈরাচার পতন দিবস কীভাবে হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার পদত্যাগের সময় কোনো আন্দোলন ছিল না। শুধু আন্দোলন ঢাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। তাহলে ক্ষমতা ছাড়লাম কেন। এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ বিরোধী দল ২০ দলীয় জোট বলেছিল, ক্ষমতা ছেড়ে নির্বাচনে আসেন। দেখি কতটা আসন পান। কিন্তু এরপর জাস্টিস সাহাবুদ্দিন ও বিরোধী দল ওয়াদা ভঙ্গ করেছিল। তারা আমাকে ও আমার মন্ত্রিসভার সদস্যদের কারাগারে নিক্ষেপ করে। ১৯৯০ সালে আমার সরকার অবৈধ সরকার ছিল না। এটা স্বীকৃত ও সাংবিধানিক ছিল। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে।’
জাস্টিস সাহাবুদ্দিন বেইমান
বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে বেইমান অ্যাখা দিয়ে এরশাদ বলেন, ‘জাস্টিস সাহাবুদ্দিন বেইমান। তিনি প্রধান বিচারপতি থেকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। একটা মানুষ দুটি সাংবিধানিক পদে থাকতে পারেন না। এ জন্য একদিন তাঁর বিচার হবে। এ থেকে বাঁচতে সংবিধানের একাদশ সংশোধনী করেছে।’ তিনি দাবি করেন, এরশাদ আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে—এ ভয়েই তৎকালীন রাজনৈতিক দলগুলো দ্বাদশ সংশোধনী করে। দ্বাদশ সংশোধনীকে তিনি আতঙ্কের ফল বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘নয় বছর ক্ষমতায় ছিলাম, কেউ বাংলাদেশকে বলতে পারেনি অকার্যকর রাষ্ট্র। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। আমরা ক্ষমতায় আসলে জনগণকে সুশাসন দেব। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ব। আমি আজ এই সমাবেশ থেকে উজ্জীবিত হলাম। নতুন বাংলাদেশ গড়ব ইনশাআল্লাহ।’
জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।