বান্দরবানের ৫০ উপজাতীয় পরিবার গিরিঝিরির পানির ওপরই নির্ভরশীল
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৫৩:৩৭,অপরাহ্ন ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক::
জর্দান পাড়া ও চিনলুংপাড়া। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত ২টি পাড়ার অবস্থান বান্দরবান শহরের অদুরে কুহালং ইউনিয়নে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট বিরাজ করছে এ ২টি পাড়ায়। এ পাড়া ২টিতে নেই কোন নলকূপ বা রিংওয়েল। একটি প্রাকৃতিক গিরিঝিরির প্রবাহমান দূষিত সামান্য পানির ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল এ ২টি উজাতীয় পাড়ার প্রায় ৫০টি পরিবারের ৩০০ মানুষ।
ঝিরি পাশে পাহাড় ঘেঁষে তৈরি করা গর্ত থেকেই খাবার পানি সংগ্রহ করেন ২টি পাড়ার নারী-পুরুষ। শুষ্ক মৌসুমে এ ঝিরির দূষিত পানিই খাবার, গোসলসহ গৃহস্থলীর যাবতীয় কাজে ব্যবহার হয়। জর্দান পাড়ার সাথে হেডম্যানপাড়ামুখ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি কাঁচা সড়ক সা¤প্রতিক সময়ে নির্মিত হলেও চিনলুং পাড়ার ১৫টি বম উপজাতীয় পরিবারের যোগাযোগ মাধ্যম একমাত্র পাহাড়ি পথ ও ঝিরি পথই।
যুগ যুগ ধরেই ২টি পাড়ার ৫০টি পরিবারের সদস্যরা নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত থাকলেও সরকারি বা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা মহল থেকে সুনজর দেয়া হচ্ছে না। জর্দান পাড়া থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দুরে হেডম্যান পাড়া এবং চিনলুং পাড়া থেকে ২ কিলোমিটার পাহাড়ি-ঝিরি পথ পেরিয়েই থোয়াইংগ্যা পাড়ায় গিয়ে শিশু-কিশোরদের প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করতে হয়। এ ২টি পাড়া মিলে জর্দান পাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্যে বহুবার আবেদন-নিবেদন করা সত্ত্বেও কোনো মহলই এখনো এগিয়ে আসেনি বিদ্যালয় চালু করার কাজে। ফলে এ ২টি পাড়ার উপজাতীয় পরিবারের কঁচিকাচা শিশুরা অবাধে শিক্ষাঅর্জন করার সুযোগ বঞ্চিত। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই এ ২টি পাড়ায়,আর্থিক অবস্থা ভাল যেসব পরিবারের, কেবল তারাই সোলার প্যানেল ব্যবহার করে।
জর্দান পাড়ার আদর্শ কৃষক জোয়াকিম ত্রিপুরা, পাস্টর সধুলা ত্রিপুরা মনদোলা, জোসেফ ত্রিপুরা এবং যুবনেতা ইসাধন ত্রিপুরা জানান, হেডম্যানমুখ পাড়ার সাথে জর্দান পাড়া পর্যন্ত সদ্যনির্মিত কাঁচা সড়কপথ দ্রুত ইটের সলিং করা না হলে আসন্ন বর্ষায় এ সড়কপথ বিধস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ পাড়ার প্রবীণ শিক্ষক মংকই ত্রিপুরা অভিযোগ করেন, বান্দরবান জেলা শহরের পোষ্য কোটায় একজন শিক্ষকের ৩/৪জন করে ছেলে-মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বহুবার চেষ্টা-তদবির করা সত্ত্বেও এ প্রবীণ শিক্ষকের কেকান ছেলে-মেয়েকে সেই পোষ্য কোটার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পাবার সুযোগ দেয়া হয়নি।
জর্দান পাড়ার ছাত্রী সাগরিকা ত্রিপুরা এবং প্রিয়া ত্রিপুরা বলেন, তাদের এলাকায় ভাল কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও গড়ে না উঠায় তাদের অনেকেই জেলার বাইরে গিয়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চতর পর্যন্ত শিক্ষা অর্জনে বাধ্য হচ্ছে। এত তাদের অভিভাকরা চরম অর্থসংকটে পড়েছেন। পানীয়জল সরবরাহ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুত সংযোগ দ্রুত চালু করার দাবি তুলেছেন এ দুই ছাত্রী।
চিনলুং পাড়ার কারবারি জানান, থোয়াইংগ্য পাড়ার সাথে চিনলুং পাড়া পর্যন্ত যে পাহাড়ি পথ রয়েছে, তার স¤প্রসরাণসহ উন্নয়ন এবং জর্দান পাড়ার সাথে চিনলুং পাড়ার সরাসরি সংযোগ সড়কটি নির্মিত হলে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ এলাকায় কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য দ্রুত পরিবহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে এ ২টি পাড়ার কৃষকদের জীনমান উন্নয়ন ও আর্থিক সুবিধাও বৃদ্ধি পাবে।
সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম আবদুল কুদ্দুছ এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে জানিয়েছেন, তিনি গত ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন উপলক্ষে জর্দান পাড়া সফর করেছেন। সেখানে তিনি এলাকাবাসীর সাথে মতবিনিময় করেছেন এবং বিরাজমান সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানে সাধ্যমত কাজ করবেন বলে জানান।