বাংলাদেশি খুঁজতে আসাম পুলিশের বিজ্ঞাপন!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:৩৬:৫১,অপরাহ্ন ২৪ এপ্রিল ২০১৫
নিউজ ডেস্ক::
ভারতের আসামে যে অবৈধ বাংলাদেশিরা ‘লুকিয়ে আছেন’, তাদের শনাক্ত করতে সাধারণ মানুষের সাহায্য চেয়ে খবরের কাগজে বিশাল বিজ্ঞাপন দিয়েছে রাজ্যের পুলিশ। প্রথম দফার বিজ্ঞাপনে নাম আছে ১৬শ বাংলাদেশির। পরে আরও নাম প্রকাশ করা হবে বলে তারা জানিয়েছে। বাংলাদেশিদের অবৈধ অনুপ্রবেশ আসামে বরাবরই রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর একটি ইস্যু। আসামে প্রতিটি আন্দোলনে, প্রতিটি নির্বাচনে বারে বারে ছায়া ফেলেছে এই অনুপ্রবেশের প্রশ্ন। কিন্তু তাতে যে পরিস্থিতি কিছু পাল্টেছে তা নয়। অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়ে সমস্যা মোকাবেলা করতে যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে তাদের হিসাব অনুযায়ী রাজ্যে এ মুহূর্তে অন্তত ৩৮ হাজার বাংলাদেশি আছেন যারা বেআইনিভাবে আসামে বসবাস করছেন। এদের খুঁজে বের করার কঠিন দায়িত্বই পড়েছে আসাম পুলিশের ঘাড়ে। যার পরিণতি এই বিজ্ঞাপন!
‘এই কাজটা আসলে খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার চেয়েও কঠিন। যাদের অবৈধ বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, তারা তো বেশিরভাগই বাংলাভাষী মুসলিম। রাজ্যের কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে তারাও মিশে আছেন। ফলে একমাত্র স্থানীয় মানুষ এগিয়ে এসে তাদের ব্যাপারে তথ্য দিলেই তাদের খুঁজে বের করা সম্ভব। যে কারণে আমরা এই বিজ্ঞাপন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’, বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন আসাম পুলিশের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। কিন্তু কাদেরকে বলা হচ্ছে এই অবৈধ বাংলাদেশি? কাদের নাম আছে এই তালিকায়?
এক কথায় এর উত্তর হলো, ১৯৭১ সালের পর যারা অবৈধভাবে (অর্থাৎ ভিসা ছাড়া) বাংলাদেশ থেকে আসামে ঢুকেছেন এবং তারপর থেকে সেখানেই রয়ে গেছেন তাদের নামই এখানে আছে। আর যেহেতু তাদের এখন আর কোনও হদিস মিলছে না, তাই ট্রাইব্যুনালের পরিভাষায় তাদের নামকরণ করা হয়েছে ‘আনট্রেসড ডিক্লেয়ার্ড ফরেনার্স’ অথবা ‘সন্ধানহীন ঘোষিত বিদেশি নাগরিক’। তবে ১৯৭১’র আগে থেকেই যারা আসামে আছেন বলে প্রমাণিত। সে তারা যেভাবেই ভারতে ঢুকুন না কেন, তাদেরকে এই তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।
আইনি পরিভাষায় যতই গালভারি নাম দেওয়া হোক, এই লোকগুলো আসলে বেশিরভাগই খেটে-খাওয়া গরিব মানুষ। চাষের ক্ষেতে দিনমজুরি করে কিংবা শহর-মফস্বলে রিকশা চালিয়েই তাদের দিন গুজরান হয়। পুলিশি বিজ্ঞাপনের অর্থ হলো তারা আশা করছে রিকশাচালক সিরাজুল ইসলাম বা খেতমজুর বদিউল আলমের পাড়াপড়শিরাই গিয়ে থানায় খবর দেবেন, অমুকে ৮৬ সালে বাংলাদেশ থেকে আসামে ঢুকেছে। ওকে বিদেশি বলে ধরুন! তবে তার চেয়েও বড় কথা, যদি এই হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসীকে ধরাও যায়. তাদের নিয়ে কী করা হবে?
আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সাফ সাফ স্বীকার করে নিয়েছেন, আসলে সরকারের করার কিছুই নেই। ‘আমরা যতই তাদের অবৈধ বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করি, বাংলাদেশ সরকার যদি তাদের স্বীকার না করে তাহলে তাদের তো আর জোর করে আমরা পুশব্যাক করতে পারব না। বাংলাদেশ এদের ফেরত চায় না, ফলে তাদের ডিপোর্ট করার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকছেই’, বলছেন গগৈ। তাহলে আপনার সরকারের পুলিশ খবরের কাগজে বিরাট বিরাট বিজ্ঞাপন ছাপছে কেন?
‘সে পুলিশের কাজ পুলিশ করছে। কিন্তু আপনাদের বুঝতে হবে আসামের মুখ্যমন্ত্রীর তো বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার এখতিয়ার পর্যন্ত নেই’, অসহায় উত্তর তরুণ গগৈ-এর। আসামের পুলিশ অবশ্য এই গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে অসুবিধার কিছু দেখছে না। রাজ্য পুলিশের সুপারিন্টেন্ডেন্ট (সীমান্ত) কে কে বৈশ্য জানিয়েছেন, আসামের মোট ৩৫টি পুলিশ-জেলার মধ্যে ১২টির অবৈধ বাংলাদেশির তালিকা প্রথম দফার বিজ্ঞাপনে বেরিয়েছে। বাকি জেলাগুলোর তালিকা তৈরি করার কাজ চলছে, সেগুলোও খুব শিগগিরই বিজ্ঞাপনের আকারে খবরের কাগজে প্রকাশ করা হবে।
প্রথম দফায় যে জেলাগুলোর নাম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ‘আনট্রেসড ডিক্লেয়ার্ড ফরেনার্স’ আছেন বিশ্বনাথ চারিয়ালি জেলাতে – মোট ৬৮১জন। পরের দফার কোনও কোনও জেলায় তালিকা আরও অনেক লম্বা হতে যাচ্ছে বলেই খবর। গোটা কাণ্ডডাতে শেষ পর্যন্ত হবে না হয়তো কিছুই – কিন্তু আপাতত পাতার পর পাতা সরকারি বিজ্ঞাপন মেলায় খুশির হাসি হাসছে আসামের খবরের কাগজগুলো, আর আরও এক দফা অহেতুক হেনস্তার আশঙ্কায় দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন রাজ্যের বহু বাংলাভাষী মুসলিম।