পুলিশের গুলিতে ২০ চন্দন চোরাকারবারি নিহত
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২৮:৩৭,অপরাহ্ন ০৭ এপ্রিল ২০১৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের গভীর জঙ্গলে পুলিশের চালানো এক অভিযানে চন্দনকাঠের অন্তত ২০জন চোরাকারবারি মারা গেছে।
চন্দনদস্যুদের বিরুদ্ধে অন্ধ্রের পুলিশ সম্প্রতি কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে, আর তার অংশ হিসেবেই এই অভিযান চালানো হয়।
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও কর্ণাটক – এই তিন রাজ্যের সীমান্ত যেখানে মিশেছে সেখানকার ঘন জঙ্গলে রয়েছে চন্দনকাঠের বন, আর সেই চন্দনের চোরাকারবার সেখানকার একটা বড় সমস্যা।
চন্দনকাঠের মধ্যেও সবচেয়ে দামী আবার রেড স্যান্ডার্স বা লাল চন্দন, আর সেটা সবচেয়ে বেশি মেলে অন্ধ্রের চিত্তুর জেলার শেষাচলম জঙ্গলে।
সোমবার রাত থেকে শুরু হওয়া যে অভিযানে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে কুড়িজন প্রাণ হারিয়েছেন, সেটাও ঘটেছে এই জঙ্গলেই।
অন্ধ্র পুলিশের মহানির্দেশক জে ভি রামুডু জানান, তাদের টাস্ক ফোর্স গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিল শত শত চোরাকারবারি ও কুলি লাল চন্দনের বনে জড়ো হয়েছে।
তাদের ধরতে টাস্ক ফোর্স যখন জঙ্গলে হানা দেয়, তখন কুড়ুল-ছুরি-পাথর-লাঠিসোঁটা নিয়ে চোরাকারবারিরা পুলিশকে আক্রমণ করলে তারাও পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয়।
ঘটনাটি স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে কারণ নিহতরা প্রায় সবাই পাশের রাজ্য তামিলনাড়ুর ইরোড ও ভেলোর জেলার বাসিন্দা।
এ খবর জানাজানি হতেই তামিল রাজনীতিকরাও অন্ধ্র পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত দাবি করতে শুরু করেন। মুখ্যমন্ত্রী তদন্ত চেয়েছেন।
তারও আগে তামিল জাতীয়তাবাদী নেতা ভাইকো বলেন, অভিযানে যে পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন তাদের হত্যার অভিযোগে বিচার করতে হবে।
এই এনকাউন্টার ধীরে ধীরে রাজনীতির মোড় নিলেও আসলে চন্দনকাঠের চোরাকারবার এই অঞ্চলের বিরাট এক সমস্যা।
বিবিসি বাংলাকে মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ড: এস সাথিক বলেন এই জঙ্গলগুলোতে দুতিনটে রাজ্যের সীমানা মিশেছে বলে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পালিয়ে যাওয়া যায় সহজে।
তা ছাড়া এই সব চক্রের সঙ্গে রাজনীতির লোকরাও জড়িত, তারা এদের সুরক্ষা দেন এবং লুঠের বখরাও পেয়ে থাকেন।
এই চন্দনদস্যুরা অতি নৃশংস, এদের কাজে বাধা দিতে গেলে লরির নিচে চাপা দেওয়া বা স্রেফ গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যার অনেক নজির আছে।
কিন্তু তিন রাজ্যের পুলিশের লাগাতার অভিযান সত্ত্বেও এই চন্দনকাঠের কারবার বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন?
ড: সাথিক এর জবাবে বলেন, চন্দনকাঠ এত দামী, এর থেকে যে তেল হয় তারও এত দাম – যে এর প্রলোভন কাটিয়ে ওঠা মুশকিল। একটা প্রমাণ সাইজের চন্দনগাছ পাচার করতে পারলে তার দাম পঞ্চাশ লক্ষ টাকারও অনেক বেশি হতে পারে।
চন্দনদস্যুদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযানে একসঙ্গে কুড়িজনের মৃত্যুর ঘটনা ভারতেও কখনও ঘটেনি। তার ওপর বাসিন্দারা ছিলেন ভিনরাজ্যের। ফলে শেষাচলম জঙ্গলের এই অভিযান নিয়ে বিতর্ক সহজে থামবে বলে মনে হচ্ছে না।