পরীক্ষা হবেনা, স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে!
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:২১:৫২,অপরাহ্ন ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪
নিউজ ডেস্ক:: নগরীর ফয়’সলেক এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্কুলটিতে বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। শনিবার সকালে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে এসে দেখতে পান, স্কুলে তালা মেরে দেয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের জানান, তাদের স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের পরীক্ষা নেয়া হবেনা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহানারা বেগম বলেন, অনেক কষ্ট করে আমি স্কুলের কার্যক্রম চালু রেখেছিলাম। আমি স্কুলে বস্তির দরিদ্র ছেলেমেয়েদের পড়াতাম। আমি স্কুলটিকে আর চালাতে পারলাম না।
ফয়’সলেক পূর্ব আবাসিক এলাকায় কনকর্ড গেইটের সামনে জিয়া স্মৃতি ক্লাব নামে একটি সংগঠনের কার্যালয়ে স্কুলটির কার্যক্রম চলছিল। আলো প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে স্কুলটির প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে স্থানীয় বস্তির ১৬১ জন দরিদ্র ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
শাহানারা বেগমের ভাই সামসুদ্দোহা জুয়েল বাংলানিউজকে জানান, ২০০১ সালে ফয়’সলেক কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কিং মাঠে কনকর্ডের নিরাপত্তা কর্মী জয়নাল গাজী বস্তিবাসীদের লেখাপড়ায় স্কুলের কার্যক্রম শুরু করেন। তার স্ত্রী শাহানারা বেগম শুরু থেকে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে আছেন। জয়নালের মেয়ে, শ্যালকসহ পরিবারের সদস্যরাই মূলত ছেলেমেয়েদের ওই স্কুলে পড়াতেন।
শুরুতে উৎস নামের একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) স্কুলটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। কিন্তু বছর তিনেক পর তারা অর্থায়ন বন্ধ করে দেন। এরপর জয়নাল ও শাহানারা নিজেরাই স্থানীয় জমিদার কলোনিতে দু’টি বেড়ার কক্ষ ভাড়া নিয়ে স্কুলের কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
শাহানারা বেগম জানান, ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি আগুনে স্কুল পুড়ে যায়। এরপর জয়নালদের পক্ষে স্কুলের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন তারা স্থানীয় জিয়া স্মৃতি ক্লাবের সভাপতি আব্বাস গাজীর শরণাপন্ন হন। আব্বাস গাজী তাদের জিয়া স্মৃতি ক্লাবে স্কুলের কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেন। এরপর থেকে সেখানেই স্কুলের কার্যক্রম চলছিল।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্কুলের জন্য স্থায়ী ভবন নির্মাণ করতে ওই এলাকার কিছু খাস জমি বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানান শাহানারা।
তিনি অভিযোগ করেন, ওই আবেদন জানানোর পর থেকে খাস জমির দখলদাররা তাকে বিভিন্নভাবে হুমকিধমকি দিয়ে আসছিল। এমনকি তাকে স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ করারও চাপ দেন। এরপর শুক্রবার রাতে দখলদার যুবকরা জিয়া স্মৃতি ক্লাবে এসে স্কুলের আসবাবপত্র তছনছ করে। শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সব ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। এসময় শাহানারাকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ ঘটনায় স্থানীয় খুলশি থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন শাহানারা।
তবে খুলশি থানার ওসি মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় জিয়া স্মৃতি ক্লাবে দু’গ্রুপের গন্ডগোলের খবর পেয়েছিলাম। তবে আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। স্কুলের বিষয়টি আমি জানিনা। জানলে আমি এভাবে স্কুলটি বন্ধ করে দিতে দিতাম না।