পরীক্ষামুলকভাবে মানুষের মাথা প্রতিস্থাপন!
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১৩:৪৬,অপরাহ্ন ১১ এপ্রিল ২০১৫
তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক::
প্রথমবারের মতো মানুষের মাথা প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। রাশিয়ার ৩০ বছর বয়সী ভালেরি স্পিরিদোনভের স্বেচ্ছায় পরীক্ষামুলক এ অস্ত্রোপচার করাতে রাজি হয়েছেন। কম্পিউটার বিজ্ঞানী স্পিরিদোনভ মেরুদণ্ডের বিরল রোগে ভুগছেন। জিনগত ওই রোগের নাম ওয়ার্ডনিং-হফম্যান ডিজিজ। এর কারণে তিনি হাঁটাচলার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমে অবনতি হচ্ছে। অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেবেন বিতর্কিত ইতালীয় শল্যচিকিৎসক সের্গিও কানাভারো।
তিনি দাবি করেন, মানুষের মাথা অপসারণ করে সুস্থ শরীরে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। তার উদ্ভাবিত ওই চিকিৎসাপদ্ধতিতে আগামী দুই বছরের মধ্যেই প্রথম মাথা প্রতিস্থাপন করা হবে।
স্পিরিদোনভ যুক্তরাজ্যের ডেইলি মিরর পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি কি ভয় পাচ্ছি? অবশ্যই। কিন্তু এটা যে শুধু আতঙ্কের, তা নয়। ব্যাপারটা একই সাথে বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। কিন্তু আমার কাছে তো বিকল্প নেই। বর্তমান তো, তা মৃত্যুযন্ত্রণার চেয়ে অনেক বেশি মনে হয়।’
ওয়ার্ডনিং-হফম্যান রোগের প্রভাবে স্পিরিদোনভের মাংসপেশি ক্রমে ক্ষয়ে যাচ্ছে। নজিরবিহীন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর মাথাটি শরীর থেকে আলাদা করা হবে। এরপর দাতার শরীরে তা প্রতিস্থাপন করা হবে। তবে সেই দাতা কে হবে তা নিশ্চিত হয়নি।
স্পিরিদোনভ বলেন, ‘আমার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং তা পাল্টাবে না। যদি আমি এ অস্ত্রোপচার না-ও করাই, আমার পরিণতি হবে দুঃখজনক। কারণ, আমার শারীরিক অবস্থা প্রতিনিয়ত আগের চেয়ে খারাপ হচ্ছে।’ স্পিরিদোনভ ওই অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে ইতিমধ্যে চিকিৎসক কানাভারোর সাথে কথা বলেছেন।
সিএনএন জানায়, মাথা প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার করাতে আগ্রহী অনেকের কাছ থেকেই ই-মেইল পেয়েছেন কানাভারো। মাংসপেশি ক্ষয়জনিত রোগে আক্রান্ত কোনো মানুষের ওপর প্রথম ওই শল্যচিকিৎসা প্রয়োগ করতে চান ইতালীয় ওই চিকিৎসক।
তিনি এ ব্যাপারে নিজের পরিকল্পনা আগামী জুনে অনুষ্ঠিতব্য আমেরিকান একাডেমি অব নিউরোলজিক্যাল অ্যান্ড অর্থোপেডিক সার্জনসের (এএএনওএস) বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপন করবেন।
কানাভারো বলেছেন, তিনি ওই অস্ত্রোপচারের জন্য ইতিমধ্যে কয়েকজন সহযোগী চিকিৎসক ও নার্স বাছাই করেছেন। ওই দলের মোট সদস্যসংখ্যা ১৫০। অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করতে তাঁদের ৩৬ ঘণ্টা লাগবে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ু শল্যবিদদের সংগঠন আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর নিউরোলজিক্যাল সার্জনসের প্রধান হান্ট বাটজার বলেন, তিনি চান না কেউ ও রকম ভয়ংকর শল্যচিকিৎসার মধ্য দিয়ে যান। তিনি নিজের শরীরে কাউকে এ রকম অস্ত্রোপচার করার সুযোগ দেবেন না। কারণ, অনেক ব্যাপার আছে যেগুলো মৃত্যুর চেয়েও বেশি যন্ত্রণাকর হতে পারে।
চীনা বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে ইঁদুরের মাথা প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে অবস্থিত কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির চিকিৎসা অনুষদের বিজ্ঞানী রবার্ট হোয়াইটের নেতৃত্বে একটি বানরের মাথা প্রতিস্থাপন করা হয়।
সূত্র: সিএনএন, ডেইলি মিরর, ইনডিপেনডেন্ট।