দেড় মাসে কেবল যুক্তরাজ্য থেকেই সিলেট ফিরেছেন ১৯০৩৮ জন
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৭:১৪,অপরাহ্ন ১৯ মার্চ ২০২০
নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের দেশে না ফেরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া দেশে না আসতে বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশের সাথে বিমান যোগাযোগও বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশও।
তবে এসব সত্ত্বেও কমছে না প্রবাস থেকে দেশে ফেরা। প্রবাসীবহুল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সিলেট। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ প্রবাসীই যুক্তরাজ্যে থাকেন। গত দেড়মাসে কেবল যুক্তরাজ্য থেকেই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে সিলেটে ফিরেছেন ১৯ হাজার ৩৮ জন।
একে তো প্রবাসীবহুল তারওপর সীমান্তবর্তী তাই নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের জন্য সিলেটকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ঝুঁকি অধিক থাকলেও তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি গড়পড়তাই। প্রতিদিনই সিলেট ফিরছেন প্রবাসীরা। ফিরেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই। কয়েকজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলা হলেও তা মানছেন না অনেকে। ফলে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় সিলেটে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এজন্য এখানে সবচেয়ে বেশি সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষত বিদেশ থেকে যারা আসছেন তাদের স্ব উদ্যোগে কোয়ারেন্টিন থাকতে হবে। লোকজনের সাথে মেলামেশা এড়িয়ে চলতে হবে।
চীনে প্রথম দেখা দেওয়া নভেল করোনাভাইরাস ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের সব দেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার।
সিলেটের সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ মার্চ সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর হয়ে যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট ফিরেছেন ১৯০৩৮ জন। আর বিভিন্ন স্থল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ফিরেছেন আরও ৫৬৬৯ জন। কেবল সিলেটের স্থল ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে দেশে ফিরেছেনে মোট ২৪ হাজার ৭০৭ জন। এছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়েও সিলেটে এসেছেন অনেকে। বিপুল সংখ্যক লোক দেশে ফিরলেও এপর্যন্ত পুরো বিভাগে হোম কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়েছে ৬২৩ জনকে। বাকি প্রবাসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। আবার হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা নিয়ম ভঙ্গ ঘরে বাইরে ঘোরাফেরা করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, এরআগে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে আগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ নিলেও মূলত গত ১০ মার্চ থেকে সিলেটে আসা প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৮ দিনে ৬২৩ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০২ জনকে কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা বেশিরভাগই প্রবাসী ও তাদের স্বজন বলে জানান তিনি।
ছয়শতাধিক লোক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হলেও এই ব্যবস্থা কতোটা কার্যকর এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) মিসবাহ উদ্দিন বলেন, কেউ এ ব্যাপারে আমাদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করলে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
আর সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বলছেন, হোম কোয়ারেন্টিনে যারা আছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছি। তবে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া সত্যিই দুষ্কর। এ জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এদিকে, শামসুদ্দিন হাসপাতালে লন্ডন প্রবাসী এক নারীকে মঙ্গলবার থেকে কোয়ারেন্টিন করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র। তিনি আরও জানান, শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে মোট ১১ জন ছিলেন, এদের মধ্যে ১০ জনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।